সাইয়েদ কুতুব তাঁর মাইলস্টোন বইয়ে এমন একটা দলের কথা বলেছেন যারা কিনা তাদের আদর্শ দ্বারা ব্যাপকভাবে চালিত হবে, আদর্শ ভালোভাবে বুঝবে ও বোঝাবে, মানুষকে একটা পজেটিভ ভিশন দেবে ও লেগে থাকবে বিপ্লবের কাজে। একটা সময় তারা সমাজে সিগনিফিক্যান্ট পরিবর্তন আনবে। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের পরে সায়েন্সে প্রকাশিত একটা স্টাডিতেও আলোচনা করা হয়েছে এ ব্যাপারে।
সেখানে বলা হয়, সমাজে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য মাত্র ২৫% মানুষ দরকার। মেজরিটি না। ২৫% মানুষ যদি একটা নির্দিষ্ট কজের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে যায় এবং একটা নির্দিষ্ট পন্থায় আচরণ করে তাহলে সমাজের ৭২-১০০% মানুষের চিন্তাকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এখানে শুধু কয়েকটা কাজ প্রয়োজন। আদর্শ বা আইডিয়ার ব্যাপারে শক্তিশালী অবস্থান, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা, নির্দিষ্ট পন্থায় কাজ করা।
আমরা সাহাবাদের ক্ষেত্রে এমনটা দেখি। তারা ছিলেন এমন এক প্রজন্ম যাদের জীবনটাই ছিলো দ্বীন, দ্বীনই ছিলো জীবন। দ্বীন কায়েমের কাজই ছিলো তাদের সামগ্রিক চিন্তার মূল। দেশ থেকে দেশ, সাম্রাজ্য থেকে সাম্রাজ্যে দ্বীনের ঝান্ডা নিয়ে গিয়েছেন। দ্বীনের ব্যাপারে তারা খুব পরিষ্কার ধারণা রাখতেন। এবং প্রিটি মাচ সব সাহাবারাই দ্বীনের ব্যাপারে আপোষহীন, শক্তিশালী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
ফলে কয়েকশ মানুষ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তারা অর্থপৃথিবী জয় করে নেন।
বাংলাদেশের মুসলমানদের সমস্যা হলো, বাংলাদেশের মুসলমানরা ব্যাপক মাত্রার প্রতিক্রিয়াশীল। হঠাৎ করে মুসলিমদের উপরে বৈষম্য বা নির্যাতনের কোনো একটা ঘটনা আসলো, আমরা খুব আবেগী হয়ে গেলাম। মনে হলো, আমাদের কিছু একটা করে ফেলতেই হবে। কিছু করতে পারলাম না, কয়েকদিন পর ভুলে আবার লেগে গেলাম আড্ডাবাজি, জীবনের সুখ ও আনন্দে। ফলে দিন যায়, অবস্থা বদলায় না।
দ্বীন কায়েমের কাজ করুন, মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত বলুন কিংবা যেকোনো কজের জন্য বলুন, একদল সংখ্যাগরিষ্ট কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক দরকার, যারা আদর্শের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখবে, দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করে যাবে, আপোষহীন অবস্থান গ্রহণ করবে। এটা কোনো রিএক্টিভ কাজ হবে না, করে যেতে হবে। কোনো ইস্যু না থাকলেও করে যেতে হবে। ভালো না লাগলেও করে যেতে হবে।
যদি তা করা যায় তাহলে হয়তোবা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা যাবে।