ইসলামে ইজমা ও ক্বিয়াসের হুকুম কী?

ইসলামে ইজমা ও ক্বিয়াসের হুকুম কী?


বিশুদ্ধ ‘ইজমা’ ইসলামী আইন প্রণয়নের অন্যতম উৎস। যদি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, সেক্ষেত্রে এটি একটি বাধ্যতামূলক শারঈ দলীল এবং কারোর পক্ষে এটির বিরোধিতা করা জায়েয নয়। কিছু শর্তসাপেক্ষে ‘ইজমা’ ও ‘ক্বিয়াস’ দু’টিই শারঈ দলীল হিসাবে বিবেচিত। কুরআন ও সুন্নাহর পরের স্থান হল ইজমার, আর ইজমার পরের স্থান হল ক্বিয়াসের।

ইজমা-এর আভিধানিক অর্থ ঐকমত্য, সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত, দৃঢ় সংকল্প ইত্যাদি। পরিভাষায় ইমাম জারকাশী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, هو إتفاق مجتهدي هذه الأمة بعد النبي ﷺ على حكم شرعي

‘ইজমা হল, রাসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশার পর শারঈ কোন হুকুমের বিষয়ে এ উম্মতের মুজতাহিদগণের ঐকমত্য’ (আল-বাহরুল মুহীত্ব, ৬/৩৭৯ পৃ.)। উক্ত সংজ্ঞা প্রসঙ্গে শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘إتفاق (ঐকমত্য) শব্দ দ্বারা ‘মতানৈক্যের অস্তিত্ব বের হয়ে গেছে। যদিও মতানৈক্য একজন বিদ্বানের পক্ষ থেকে হয়। সুতরাং কোন বিষয়ে মতভেদ বিদ্যমান থাকলে সে বিষয়ে ইজমা সংগঠিত হবে না। ‘মুজতাহিদগণ’ (مجتهدي) শব্দ দ্বারা সাধারণ মানুষ ও মুকাল্লিদরা বের হয়ে গেছে। কাজেই এদের একমত হওয়া বা ভিন্ন মত পোষণ করা ধর্তব্য নয়। ‘এ উম্মতের’ (هذه الامة) অংশ দ্বারা অন্য জাতির ঐকমত্য বের হয়ে গেছে। সুতরাং ভিন্ন জাতির ঐকমত্য শরী‘আতে ধর্তব্য নয়। ‘রাসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশার পর’ (بعد النبي صلى الله عليه وسلم) অংশ দ্বারা তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর (ছাহাবীদের) ঐকমত্য বের হয়ে গেছে। সেগুলো স্বয়ংসম্পন্ন ভাবে দলীল হওয়ার কারণে তা ইজমা হিসাবে অভিহিত হবে না। কারণ রাসূল (ﷺ)-এর কথা, কাজ, মৌন সম্মতি ও অনুমোদনের সুন্নাহ দ্বারাই দলীল অর্জিত হয়। এজন্য ছাহাবীরা যখন বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)-এর যুগে এরূপ করতাম অথবা তাঁরা এরূপ করতেন। এগুলো বিধানগতভাবে মারফূ‘ হাদীছ, ‘ইজমার বিবরণ’ নয় (আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ১/২১৩ পৃ.)। ‘শারঈ কোন হুকুমের বিষয়ে’ (على حكم شرعي) অংশ দ্বারা জ্ঞানগত কিংবা প্রকৃতিগত বিষয়ে ঐকমত্য বের হয়ে গেছে। এখানে এসবের কোন অনুপ্রবেশ নেই। কেননা ইজমা শরী‘আতের একটি দলীল এখানে আলোচ্য বিষয় এটিই (আল-উছূলু মিন ইলমিল উছূল দ্র., ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২০২২৭১)।

আল-কুরআন, সুন্নাহ ও ছাহাবীদের মন্তব্যের ভিত্তিতে ইজমা শারঈ দলীল হিসাবে বিবেচিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পরও যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস!’ (সূরা আন-নিসা : ১১৫)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) সুবিবেচনা এবং দীর্ঘ গবেষণার পর বলেন, এই আয়াতটি ইজমাকে দলীল হিসাবে প্রমাণ করেছে এবং এর বিরোধিতাকে হারাম করেছে। আর এটিই সর্বাধিক উত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী মতামত (তাফসীরে ইবনু কাছীর, ২/৪১৩ পৃ.)। উক্ত আয়াত মুমিনদের পথ ও পদ্ধতির আনুগত্য করাকে অপরিহার্য করেছে এবং তাদের বিরোধিতা করা সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছে। সুতরাং এখান থেকেই তাঁদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয় (আল-ফুছূল ফিল উছূল, ৩/২৬২ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই উম্মতের ইজমা দলীল হিসাবে স্বীকৃত (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৮/১২৫ পৃ.)। অতএব যারা মুমিনদের পথের অনুসরণ করে না আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য শাস্তির ঘোষণা করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হল যে, মুমিনদের আনুগত্য করা অপরিহার্য। এটি এমন একটি বিষয় যার উপর আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং ১৯৭৯৩৭)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَ کَذٰلِکَ جَعَلۡنٰکُمۡ اُمَّۃً وَّسَطًا لِّتَکُوۡنُوۡا شُہَدَآءَ عَلَی النَّاسِ وَ یَکُوۡنَ الرَّسُوۡلُ عَلَیۡکُمۡ شَہِیۡدًا ‘এভাবে আমরা তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হতে পার এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৪৩)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মানুষের জন্য সাক্ষী হতে পারো’ এটি মানুষের কর্মের বিধানের সাক্ষ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন জানাযার ছালাতের সাক্ষ্যকে আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেন। ফলে সাক্ষীর কথা গ্রহণযোগ্য’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৯/১৭৭-১৭৮ পৃ.)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন, فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡہُ اِلَی اللّٰہِ وَ الرَّسُوۡلِ ‘অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হও, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘সুতরাং আয়াতটি প্রমাণ করে যেসব ব্যাপারে তাঁরা ঐকমত্য পোষণ করেন, সেগুলো আর প্রত্যাবর্তন করতে হবে না, অতএব সেগুলো হক্ব বা সত্য’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৯৭৯৩৭)।

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‏إِنَّ اللهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِيْ أَوْ قَالَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ ﷺ عَلَى ضَلَالَةٍ ‘আল্লাহ্ তা‘আলা আমার উম্মতকে অথবা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মতকে কখনোও পথভ্রষ্টতার উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না’ (তিরমিযী, হা/২১৬৭; আবূ দাঊদ, হা/৪২৫৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৫০; ছহীহুল জামি‘, হা/১৮৪৮; তাখরীজুস সুন্নাহ, হা/৮২)।

উক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা এই উম্মতকে গোমরাহী অথবা ভ্রান্তির উপর ঐকমত্য হওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছেন (আল-বাহরুল মুহীত্ব, ৬/৩৯৬ পৃ.)। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, কোন বিষয়ে এ উম্মতের ঐকমত্য পোষণ করা হয়তো হক্ব হবে, না হয় বাত্বিল হবে। যদি হক্ব হয় তাহলে সেটি দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। আর যদি বাতিল হয়, তাহলে এটি কিভাবে হতে পারে যে, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাবান এ উম্মত আল্লাহর নবী (ﷺ)-এর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি বাতিল বিষয়ের উপর ঐকমত্য পোষণ করবেন, যে বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহ সন্তুষ্ট নন? এটা তো বড়ই অসম্ভব বিষয়! (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল ইবনে উছাইমীন, ১১/৬৩ পৃ.)।

অন্যদিকে ‘ক্বিয়াস’ শব্দটি মাপ, পরিমাপ, জরিপ, অনুমান, তুলনা, অনুপাত ও যুক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়। পরিভাষায় ইমাম ইবনু কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, تسوية فرع بأصل في حكم لعلة جامعة بينهما ‘ক্বিয়াস হল, কোন হুকুমের ক্ষেত্রে মূল দলীল ও শাখাগত দলীলের মাঝে সমন্বয়কারী ইল্লত (হুকুমের কারণ) থাকার কারণে উভয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা’ (রওযাতুল নাযীর ওয়া জান্নাতুল মানাযীর, ২/১৪১ পৃ.)। উক্ত সংজ্ঞায় ‘শাখা’ (الفرع) দ্বারা উদ্দেশ্য যাকে ক্বিয়াস করা হয়। ‘মূল’ (الأصل) দ্বারা উদ্দেশ্য যার উপর অন্যকে ক্বিয়াস করা হয়। ‘বিধি-বিধান’ (الحكم) হল শারঈ দলীল যা বিধি-বিধান দাবী করে। যেমন ওয়াজিব, হারাম, ছহীহ ও ফাসিদ প্রভৃতি। ‘কারণ’ (العلة) হল ঐ অন্তর্নিহিত অর্থ যার কারণে মূল (الأصل)-এর হুকুম সাব্যস্ত হয়। এ চারটি হল ক্বিয়াসের রুকন বা ভিত্তি (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-০২২৭১)।

আল-কুরআন, সুন্নাহ ও ছাহাবীদের মন্তব্যের ভিত্তিতে ক্বিয়াস শারঈ দলীল হিসাবে বিবেচিত। তবে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম এটাকেই ইজতিহাদ বলেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اللَّهُ الَّذِى أَنزَلَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ وَالْمِيزَان ‘আল্লাহ সেই সত্তা যিনি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনি আরও অবতীর্ণ করেছেন ন্যায়দণ্ড’ (সূরা আশ-শূরা : ১৭)। ন্যায়দণ্ড বা দাঁড়িপাল্লা হল, যার দ্বারা বিভিন্ন জিনিস ওযন করা হয় এবং সেগুলোর মাঝে তুলনা করা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ؕ کَمَا بَدَاۡنَاۤ  اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُہٗ‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই আমি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করব’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২১৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূখণ্ডের দিকে পরিচালিত করি। অতঃপর তদ্বারা সে ভূখণ্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবেই হবে পুনরুত্থান’ (সূরা আল-ফাতির : ৯)। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জীবকে পুনরায় সৃষ্টি করাকে প্রথমবার সৃষ্টি করার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন এবং মৃত ব্যক্তিদেরকে জীবিত করাকে যমীন জীবিত করার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন। মূলত এটিই হল ‘ক্বিয়াস’।

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার মা মারা গেছেন এবং তার এক মাসের ছিয়াম বাকি আছে। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে এটা আদায় করে দিব? তখন তিনি বললেন, যদি তোমার মায়ের উপর ঋণ থাকত, তাহলে তুমি কি তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দিতে? সে বলল, হ্যাঁ। উত্তরে তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহর ঋণ তো পরিশোধিত হবার সবচেয়ে বেশি দাবীদার’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৯৫৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৪৮)।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার একটি কালো সন্তান জন্মেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কিছু উট আছে কি? সে জবাব দিল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সেগুলোর রং কেমন? সে বলল, লাল। তিনি বললেন, সেগুলোর মধ্যে কোনটি ধূসর বর্ণের আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে সেটিতে এমন রং কোত্থেকে এলো। লোকটি বলল, সম্ভবত পূর্ববর্তী বংশের কারণে এমন হয়েছে। তিনি বললেন, তাহলে হতে পারে, তোমার এ সন্তানও বংশগত কারণে এমন হয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৩০৫, ৬৮৪৭, ৭৩১৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৬৮)। কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত এ রকম প্রতিটি দৃষ্টান্তই ক্বিয়াসের উপর প্রমাণ বহন করে। কেননা এতে কোন জিনিসকে তার সমজাতীয় জিনিসের পর্যায়ভুক্ত করার বিষয়টি নিহিত আছে (আল-ফুছূল ফিল উছূল, ৪/৪৮ পৃ.)।

শাসনকার্য ফয়সালার ক্ষেত্রে আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উদ্দেশ্যে চিঠিতে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘...তারপর তোমার বুঝ, যা তোমার কাছে প্রতিভাত হয়, তদনুযায়ী ফায়সালা করবে। যে মাসআলার ব্যাপারে কুরআন-হাদীছে কোন দলীল নেই তা তোমার কাছে পেশ করা হলে তুমি ঐ সব মাসআলাকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ক্বিয়াস বা পারস্পরিক তুলনা করবে এবং উপমা সম্পর্কে জ্ঞান রাখবে। তারপর তোমার ধারণানুসারে যা আল্লাহর নিকট অধিকতর প্রিয় এবং হক্বের সাথে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ হয়, তার উপরই নির্ভর করবে’ (বায়হাক্বী, ১০/১১৫; দারাকুৎনী, ৪/২০৬-২০৭ পৃ.)।

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত মর্যাদাবান চিঠি, যা উম্মাহ গ্রহণ করে নিয়েছেন। ইমাম মুযনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ছাহাবীদের যুগ থেকে তার যুগ পর্যন্ত সকল ফক্বীহ একমত যে, ‘নিশ্চয় হক্বের অনুরূপ জিনিসও হক্ব এবং বাতিলের অনুরূপ জিনিসও বাতিল হিসাবে বিবেচিত এবং তারা ফিক্বহের সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে ক্বিয়াসের ব্যবহার করছেন (ইগাছাতুল লাহফান, ১/৮৬ পৃ.; দ্র. : আল-উছূল মিন ইলমিল উছূল)।

উল্লেখ্য যে, অনেক আলেম বলেন, ক্বিয়াসকে ক্বিয়াস না বলে ইজতিহাদ বলা অধিক সুসংগত। কারণ ইজতিহাদ হাদীছের শব্দ দ্বারা প্রমাণিত। পক্ষান্তরে ক্বিয়াস বা অনুমানের মধ্যে এক প্রকারের শিথিলতা আছে।

আর ইজতিহাদের অর্থ কষ্টকর কোন কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টায় নিয়োজিত থাকা। পরিভাষায় বলা হয়, بذل الجهد لإدراك حكم شرعي ‘শারঈ কোন হুকুম জানার জন্য চেষ্টায় নিয়োজিত থাকাকে ইজতিহাদ বলে’। যিনি এ ধরনের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন, তাকে মুজতাহিদ বলে। আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ﷺ)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে,

إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ

‘কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তার জন্য আছে দু’টি পুরস্কার। আর বিচারক ইজতিহাদে ভুল করলে তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৬)।

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.