মুমিন অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে

মুমিন অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে


অপ্রয়োজনীয় অর্থহীন কথা ও কাজ যাতে কোন ফল পাওয়া যায় না যেগুলোর পরিণাম কল্যাণকর নয় এবং উদ্দেশ্যও ভাল নয়। যেগুলোর আসলে প্রয়োজন নেই, না বললেও চলে। যার কারণেই একজন মুমিন সকল প্রকার অনর্থক এবং বাজে কাজ থেকে দূরে থাকবে এবং এটি তার ঈমানের দাবিও বটে। 

পবিত্র কোরআনুল কারীমে বর্ণিত রয়েছে-

وإذا مروا باللغو مروا كراما ـ

And If they pass by futility, they pass by it with honourable.

“এবং তারা (মুমিনরা) অর্থহীন বাজে ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে নিজ মর্যাদা রক্ষা করে তা পরিহার করে চলে যায়।” (সূরা আল ফুরকান: ৭২)

একজন মুমিনের সম্মান-মর্যাদা অপরিসীম, অনর্থক কথা ও কাজ তার মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মূল্যহীন কোন কথা বা কাজ নিজের মধ্যে আনতে পারে না।

মুমিনগণ সর্বদা সময়ের মূল্য দেয় এবং দায়িত্ব পালনে সর্বদা সজাগ থাকে। সে এ দুনিয়ার জীবনকে একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র মনে করবে। একজন ছাত্র যখন পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিচ্ছে সে তখন মনে করে তার পরীক্ষার হলের প্রতিটি মুহূর্ত তার আগামী জীবনের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণকারী। এ অনুভূতির কারণে সে প্রতিটি মুহূর্ত নিজের প্রশ্ন পত্রের সঠিক উত্তর লেখার চেষ্টায় ব্যয় করে। সে একটি মুহূর্তও বাজে কাজে ব্যয় করে না। 

ঠিক তেমনি একজন মুমিন ব্যক্তির দুনিয়ার জীবনকালকে এমনভাবে পরিচালনা করে যা পরিণামের দিক দিয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত হয়। মুমিন হয় একজন শান্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতির অধিকারী এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন স্বভাব ও সুস্থ রুচিসম্পন্ন মানুষ। সে সর্বদা ফলদায়ক কথা ও কাজ করে চলে এবং আজে-বাজে, গল্প-গুজব করা তাঁর স্বভাব হতে পারে না। সে ব্যঙ্গ, কৌতুক ও হালকা পরিহাস (সত্যের সাথে মিল রেখে) পর্যন্ত করতে পারে। কিন্তু উচ্ছল ঠাট্টা-তামাসায় মেতে উঠতে পারে না।

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ওয়াল জালাল মুমিনকে জান্নাতে অনেক নেয়ামতের অধিকারী করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো সেখানে তাদেরকে কোন প্রকার বাজে কথা শুনাবেন না। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

لا تسمع فيها لاغية ـ

Where they shall hear no (word) of vanity.

“সেখানে তারা (মুমিনরা) কোন বাজে কথা শুনবে না।" (সূরা গাশিয়া : ১১)

আল্লাহ তায়ালা যে আচরণকে জান্নাতের নেয়ামত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, মুমিন সে নেয়ামতের বিপরীত কোন আচরণ দুনিয়ায় করতে পারে না।

বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স.) শিশুতে, শৈশবে, যৌবনে, বৃদ্ধে জীবনের কোন অংশেই অহেতুক কথা ও কাজ করেননি। অথচ আরবের সে সময়ের কালচারই ছিল অহেতুক কথা ও কাজের সমাহার। হযরত আলী (রা.) বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, “একদা রাতের বেলায় আমি মক্কার এক টিলার চূড়ায় অন্য একজন কুরাইশ বালকের সাথে ছাগল চরাচ্ছিলাম, হঠাৎ ইচ্ছে হলো আরবীয়দের 'সমর' গল্পের আসরে গিয়ে আজ রাতে একটু আনন্দ করি। সঙ্গীকে বললাম, আমার ছাগলটার দেখাশুনা কর আমি একটু ‘সমর’ শুনে আসি। কিছু দূর যাবার পর এক বস্তির কাছাকাছি যেতেই বাজনা ও ঢোলে তবলার আওয়াজ কানে ভেসে এল। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম কোন এক লোকের বিয়ে হচ্ছে। তখন কৌতূহলবশতঃ যখন আমি সেই পথে পা বাড়াতে ইচ্ছে করলাম অমনি আমার ভীষণ ঘুম পেল। এমন এক ঘুম যে, একটুও চলতে পারলাম না। ঐখানেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরে সূর্যের কিরণের উত্তাপে অবশেষে ঘুম ভাঙ্গে।” (বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবনী) মুমিন প্রতিটি কাজ আর কথার পূর্বে চিন্তা করে আমার তো প্রতিটি কাজ ও কথা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে এবং হাশরের ময়দানে সবকিছু আমার সামনে উপস্থিত করা হবে আর হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। 

কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন-

فمن يعمل مثقال ذرة خيرا يره ـ ومن يعمل مثقال ذرة شرا يره.

Then shall anyone who has done an atom's weight of good. See it. And anyone who has done an atom's weight of evil, shall see it.

"অতঃপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখতে পাবে এবং অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তাও দেখতে পাবে।" (সূরা আয যিলযাল : ৭-৮)

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.