ভুলে যাওয়া আল্লাহর বিরাট এক নিয়ামত। মানুষ যদি মানুষকে ভুলতে না পারতো, তবে প্রিয়জন হারানোর বেদনায় সবাই মানসিক ভারসাম্যহীন—পাগলে পরিণত হতো।
কিন্তু, আল্লাহ্ তা‘আলাই আমাদের মন থেকে নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর চলে যাওয়া বা সরে যাওয়া প্রিয়জনদের স্মৃতিগুলো ঝাপসা করে দেন। এক পর্যায়ে সেগুলো কেবলই অতীত হয়ে যায়। সবাই আমরা ফিরে আসি আমাদের স্বাভাবিক জীবনে। এভাবেই চলছে দুনিয়া। সেই শুরু থেকে আজ অবধি।
.মানুষকে আরবিতে ‘ইনসান’ বলা হয়। ইনসান শব্দটি এসেছে ‘নাসয়ুন’ থেকে; এর অর্থ ভুলে যাওয়া। যেহেতু মানুষ ভুলে যায়, সেহেতু সে ইনসান। আর, ভুলেন না শুধু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। কুরআনে এসেছে, ‘‘আর তোমার রব কখনো ভুলে যান না।’’ [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬৪]
.
ভুলে যাওয়া নিয়ে সুন্দর একটি হাদিস পড়ি:
.
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন আল্লাহ তা‘আলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি তার পিঠ মাসেহ করলেন। এতে তাঁর পিঠ থেকে তাঁর সমস্ত সন্তান বের হোলো—যাদের তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্টি করবেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের দুই চোখের মাঝখানে নূরের ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি করলেন। অতঃপর তাদেরকে আদম (আ.)-এর সামনে পেশ করলেন। আদম (আ.) বললেন, ‘হে আমার রব! এরা কারা?’ আল্লাহ বলেন, ‘এরা তোমার সন্তান।’ আদমের দৃষ্টি তার সন্তানদের একজনের উপর পড়লো, যার দুই চোখের মাঝখানের ঔজ্জ্বল্যে তিনি বিস্মিত হন। তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! ইনি কে?’ আল্লাহ তা‘আলা বললেন, শেষ যামানার উম্মাতের অন্তর্গত তোমার সন্তানদের একজন। তার নাম দাউদ (আলাইহিস সালাম)। আদম বললেন, ‘হে আমার রব! আপনি তার বয়স কত নির্ধারণ করেছেন?’ আল্লাহ বলেন, ‘ষাট বছর।’ আদম (আ.) বলেন, ‘রব! আমার বয়স থেকে চল্লিশ বছর কেটে তাকে দাও।’ অতঃপর আদম (আ.)-এর বয়স শেষ হয়ে গেলে তাঁর নিকট মালকুল মাউত (মৃত্যুর ফেরেশতা) এসে হাজির হন। আদম (আ.) বলেন, ‘আমার বয়সের কি আরো চল্লিশ বছর অবশিষ্ট নেই?’ তিনি বলেন, ‘আপনি কি আপনার সন্তান দাউদকে দান করেননি?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম (আ.) অস্বীকার করলেন, তাই তার সন্তানরা অস্বীকার করে থাকে। (মূলত) আদম (আ.) ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তাঁর সন্তানদেরও ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে।’’ [তিরমিযি: ৩০৭৬, হাদিসটি সহিহ]