আধুনিকতায় মুগ্ধ দায়ীদের প্রতি কিছু নিবেদন।
( বিন্নুরি টাউন থেকে ইউথ ক্লাবের ভাইদের সতর্ক করে কিছু নিবেদন পেশ করা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও উক্ত নিবেদন গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায় মূল অংশের অনুবাদ করা হল)
কোন বিষয়কে ততক্ষণ পর্যন্ত আলোচনায় নিয়ে আসার প্রয়োজন হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম না করে। কিন্তু পানির প্রবাহ মাথার উপরে চলে যেতে থাকলে কিছু বলা জরুরী হয়ে যায়। নতুবা পরোক্ষভাবে আমরাও সেই অন্যায় কাজটির শরীক হয়ে যাই।
এরই প্রেক্ষিতে আমরা সেসব আধুনিকতায় মুগ্ধ দায়ীদের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিবেদন করতে চাচ্ছি, যারা অত্যন্ত ইখলাসের সাথে পুরো দুনিয়ায় দ্বীন প্রচারের চেষ্টা করে যাচ্ছে ঠিক, কিন্তু নিজেদের ইলমি কমতি ও বুঝের স্বল্পতার কারণে কিছু বড় বড় ভ্রান্তিতে লিপ্ত হচ্ছে।
এখানে বিশেষভাবে আমরা সেসব হযরতকে সম্বোধন করতে চাচ্ছি, যারা যুবকদের বিশেষ একটি প্লাটফর্ম “ ইউথ ক্লাব” এর সাথে সংশ্লিষ্ট। ইউথ ক্লাব নামক প্লাটফর্মটি ইসলামাবাদ থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। এখন প্রায় সকল বড় বড় শহরেই তাদের শাখা গড়ে উঠেছে। আমরা সুধারণা রাখি যে, তারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দ্বীনের খেদমতের নিয়তে এই সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট হযরতদের এই বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরী যে, দ্বীনের খেদমত ও প্রচারের জন্য আমরা কেবল বৈধ পন্থা অবলম্বন করার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত বা আদিষ্ট, অবৈধ কোন পন্থা নয়।
যদিও সংশ্লিষ্ট হযরতদের আমরা কলেজ ইউনিভার্সিটির বেদ্বীন ও সুপথভোলা মুসলিমদের নিয়ে চিন্তিত দেখি। তবে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রচারের যেই রাস্তা অবলম্বন করা হচ্ছে, সেটা কোন কল্যান বয়ে আনবে না।
এসব ভাইদের প্রথম ও সবচেয়ে বড় ভুল হল, নববী মুআশারাত তথা জীবনযাপন ও চালচলনকে পরিপূর্ণরূপে বর্জন করে দ্বীনের খেদমত করতে চাওয়া। যার অর্থ হল, দ্বীনের পরিপূর্ণ একটি অধ্যায়কে বের করে দিয়ে দ্বীন কায়েম করার চেষ্টা করতে থাকা। অথচ আমরা জানি যে, যার নববী মুআশারাতই বুঝে না আসে, তার অবশিষ্ট দ্বীন কিভাবে বুঝে আসবে?!
নিঃসন্দেহে এই পদ্ধতিতে কাজ করার ফলাফল তাই হবে, যা ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানদের দায়ীদের ক্ষেত্রে হয়েছিল। যখন তারা নবীদের মুআশারাতকে বর্জন করল, তখন নবীদের দ্বীনও তাদের থেকে বেরিয়ে গেল।
বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতে আধুনিকতায় মুগ্ধ দায়ীরা বস্তুবাদী মেজাজ নিয়ে যখন মানুষকে দ্বীনের দিকে আহবান করছে, তখন মানুষ খালেস দ্বীনের দিকে আসার পরিবর্তে বস্তুবাদী চেতনা ও নিজ নিজ ইজতিহাদের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে।
পশ্চিমের রঙে রঙিন আজিব ও গরিব তাবলিগী মেহনত অন্ততপক্ষে এই ক্ষতি করছে যে, মানুষ আহলে হক উলামায়ে কেরামের প্রতি মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়ে আধুনিকতায় মুগ্ধ এসব জ্যাকেট, চিপচাপ প্যান্ট ও মটর বাইকওয়ালা (কথিত) মুজতাহিদদের পিছনে ছুটছে, যাদের নিজেদেরই জানা নাই যে তারা কোন পথে যাচ্ছে।
ফ্রি মিক্সিং সেমিনার করা, যুবতী তরুণীদের একত্রিত করে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের কুরআন হাদিসের কথা শুনানো এবং সেটাকে ভিডিও করা- এগুলো কেবল গোমরাহির নিকৃষ্ট রূপই নয়; বরং দ্বীনকে তামাশার বস্তু বানানোর নামান্তর।
বিগত বছরগুলোতেও তাদের দ্বারা এই কাজটি হয়েছে। আবার এই বছরও এক মসজিদে তরণ তরুণীদের একত্রিত করে তাদের সাথে পার্থিব কথাবার্তা এবং খেল তামাশাও হয়েছে। এগুলো কিভাবে জায়েয হতে পারে?
আবার আপত্তিযোগ্য পর্দার সুরতে নারীদেরকে এমন কিছু বিষয়ে কথা বলানো, যা শুধু লজ্জা ও শালীনতার পরিপন্থীই না; বরং আমাদের সমাজ ওরকমভাবে এসব খারাপ বিষয়ের সাথে পরিচিতই না। তাহলে সেসব খারাপ কাজের আলোচনাকে জনপরিসরে আনার কি উদ্দেশ্য?
সংশ্লিষ্ট হযরতদের প্রতি নিবেদন থাকবে, নিজেদের কর্মপদ্ধতি ও চিন্তাকে পুনঃবিবেচনা করবে এবং এই বিষয়টি বুঝবে যে, দ্বীন প্রচারের জন্য কোন প্রকার হারাম ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা জায়েয নেই। আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতও বান্দা থেকে এমনটা কামনা করেন না।
এমন পশিমা ধাচে তাবলিগ থেকে বিরত থাকাই উত্তম, যেই ধাচ প্রাচ্যে পশ্চিমের সেই বিষ ছড়িয়ে দেয়, যেই বিষের প্রতিক্রিয়ায় আজ ইয়াহুদি- খ্রিষ্টানরাও বস্তুবাদী হয়ে গেছে। এই বিষয়ে এখনো অনেক কথা বলা বাকি। কিন্তু বক্তব্যকে সংক্ষিপ্ত রাখতে হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা আধুনিক যুগের সকল ফিতনা থেকে আমাদের ইমান ও আমলকে হেফাজত করুক। আমিন।
ফতোয়াটিতে এই অংশের পর আরো কিছু আলোচনা যুক্ত করা হয়। সেখানে নববী মুআশারাত তথা জীবনযাপন ও চাল চলনকে তৎকালীন আরবের সংস্কৃতি বলে অপালনীয় এবং দ্বীন থেকে বের করে দেয়ার প্রবণতার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়। ইসলামী নারীবাদকে ভ্রান্ত ও পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সবশেষে নিজেদেরকে এবং পরিবার পরিজন ও সন্তানদেরকে স্মার্ট উপস্থাপন আর মুখরোচক বয়ানের চক্করে পরে পশ্চিমবান্ধব ইসলাম শেখা থেকে হেফাজত করার নসীহত করা হয়।