সুখে থাকার উপায়

সুখে থাকার উপায়


সুখে থাকার মতো অনেক নিয়ামাতই চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আছে মনোমুগ্ধকর নানান সামগ্রী। খুব অল্প খরচেই মন ভালো করা যায়, এমন অনেক উপাদানও আছে বেশ। তবুও যদি জিজ্ঞেস করি, 'আপনি কি সুখী?' উত্তরে হয়তো বলবেন, 'আমি আসলে নিশ্চিত না।'

–এর কারণ হলো, আপনার অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। সেগুলো অর্জিত না হওয়ায় আপনি নিজেকে সুখী মনে করতে পারছেন না। ব্যর্থ ভাবছেন নিজেকে। আসলে সুখটা অনুভবের ব্যাপার। কেউ যদি অন্তর থেকে নিজেকে অভাবী মনে করতে থাকে, তবে সে অট্টালিকায় থেকেও সুখী হবে না কখনও। না পাওয়ার বেদনা সারাক্ষণ তাকে তাড়া করে বেড়াবে। উমার ইবনুল খাত্তাব (রদিয়াল্লাহু আনহু) একবার তাঁর এক খুতবায় বলেছেন,
“জেনে রাখো, লোভই হলো দরিদ্রতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিহার করাই হলো সচ্ছলতা।” (আবূ নুআইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ১/৫০)

সারাক্ষণ দুনিয়া নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমরা ক্লান্ত। কী পেলাম আর কী পেলাম না—এ হিসেব কষতে কষতেই দিন চলে যায় আমাদের। সারাক্ষণ হা-হুতাশ করতে থাকি আমরা। এ কারণেই আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়ামাতগুলোকে আমরা তুচ্ছ মনে করি। নিয়ামাতের সাগরে ডুবে থেকেও নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। অভাববোধও তাই দূর হয় না মনের ভেতর থেকে।

একটি হাদিসে এসেছে, "দুনিয়াই যার মূল লক্ষ্য ও সবচেয়ে বড়ো চিন্তার কারণ, আল্লাহ তাআলা তার চোখের সামনে দরিদ্রতা স্থাপন করে দেন।" (তিরমিযি, ২৪৬৫)

অপর এক হাদিসে রাসূল ﷺ বলেছেন,
"দুনিয়াপ্রীতি উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে দেয়।" (হাইসামি, ১০/২৮৬)

মূলত উচ্চাশার পরিণামই হলো দুনিয়ামুখিতা। আর এর পরিণতি হয় আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া। অপরদিকে, মন থেকে দুনিয়াবি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলে প্রাপ্ত নিয়ামাতগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই মুমিনের গুণ।

শয়তান তখন-ই আনন্দিত হয় যখন আল্লাহর একজন বান্দা নিরাশ হয়ে যায়! সুতরাং গুনাহ যতই বড় হোক না কেন তওবা করে আল্লাহর রহমতের দিকে ফিরে আসুন।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

[সূরাঃ যুমার, আয়াত নং - ৫৩]

দুনিয়াতে গুনাহ থেকে বাচার মাধ্যমেও সুখ খুঁজে পাবেন। তাই গুনাহ করা থেকে বিরত থাকুন। সুখী হতে চাইলে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। কী চাই আর তা কেন চাই সেটা বুঝতে হবে। তা না হলে আমরা কখনো আত্মার প্রশান্তি লাভ করতে পারব না। 

এ ব্যাপারে প্রিয় নবি ﷺ বলেন,
"আখিরাত যার একমাত্র লক্ষ্য ও সবচেয়ে বড়ো চিন্তা, আল্লাহ তাআলা তাকে আত্মিক সচ্ছলতা দান করেন।" (তিরমিযি, ২৪৬৫)

বলুন তো তাহলে, আত্মিক সচ্ছলতার চাইতে বড়ো আর কী হতে পারে? উচ্চ আকাঙ্ক্ষামুক্ত ও প্রশান্ত অন্তরের চাইতে মূল্যবান আর কোন সম্পদ থাকতে পারে? মনকে আখিরাতমুখী করতে পারলেই তো আত্মার মুক্তি এবং উভয় জগতের সফলতা— দুটোই নিশ্চিত হবে।
.
📚সূত্র:
📘বিপদ যখন নিয়ামাত (২),
📘মুমিনের পাথেয় (২),
📘রাসূলের চোখে দুনিয়া.
Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.