শনির দশা বা কোনো শুভ-অশুভ/অলক্ষুণে (যেমন লাকি সেভেন, আনলাকি থার্টিন ইত্যাদি) বিশ্বাস করা শির্ক—ঈমানভঙ্গের কারণ!
.রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো কিছুকে অশুভ/অলুক্ষণে মনে করা শির্ক।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৫৩৮; হাদিসটি সহিহ]
.
আল্লাহর রাসুল অন্যত্র বলেন, ‘‘অশুভ বা অমঙ্গল ভেবে যে কোনোকিছু পরিত্যাগ করলো, সে শির্ক করলো।’’ [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৭০৪৫; হাদিসটি সহিহ]
.
শায়খ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহ.) বলেন, ‘যদি কেউ বিশ্বাস করেন যে, অমুক দিবস, রাত্রি, মাস, তিথি, সময়, বস্তু, দ্রব্য বা ব্যক্তির মধ্যে শুভ বা অশুভ কোন প্রকারের ক্ষমতা বা এরূপ প্রভাব কাটানোর ক্ষমতা আছে, তবে তা শির্ক আকবার (বড় শির্ক, যার মাধ্যমে মানুষ মুশরিক হয়ে যায়) বলে গণ্য হবে। আর যদি এরূপ বিশ্বাস পোষণ না করেন, বরং সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, ভালো-মন্দ, শুভ-অশুভ—সকল কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ, কিন্তু কথাচ্ছলে এরূপ কিছু বলে ফেলেন, তবুও তা শির্ক আসগার (ছোট শির্ক) বলে গণ্য হবে। (তবে, ব্যক্তি মুশরিক হবে না)।’ [কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, পৃষ্ঠা: ৩৮৩]
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিগণের এই সংক্রান্ত ভুল চিন্তার সংশোধন করে দিতেন। যেমন: হাদিসে এসেছে, ‘‘পেঁচা অশুভ নয়।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫৭০৭] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘ভূত-প্রেত বা দৈত্য বলে কিছু নেই।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৫৬৮৮]
.
ঠিক সেভাবে: হস্তরেখা নির্ণয়, রাশিফল বলা, আকিক পাথরের বিশেষ ক্ষমতা, শনি ও মঙ্গল বারকে অপয়া মনে করা, অমাবস্যায় অমঙ্গল ধারণা করা, প্রথম কাস্টমারকে বাকি দিলে ব্যবসা লস হবে ভাবা, যাত্রাপথে হোঁচট খেলে অকল্যাণের আশঙ্কা ইত্যাদি সবই ভিত্তিহীন।
.
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কোন বস্তুকে অশুভ/অলক্ষুণে মনে করা ‘শির্ক’, কোন বস্তুকে অশুভ/অলক্ষুণে মনে করা শির্ক।’’ একথা তিনি ৩ বার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৩৯১০; হাদিসটি সহিহ]
.
মাসিক আল কাউসারের ‘প্রচলিত ভুল’ ফিচারে মাওলানা আবদুল মালেক (হাফিযাহুল্লাহ) লিখেছেন, ‘কোনো মাস, দিন বা রাতকে অশুভ মনে করা, বিশেষ কোনো সময়কে বিশেষ কাজের জন্য অশুভ ও অলক্ষুণে মনে করা—সবই জাহেলিয়াতের কুসংস্কার। এর সাথে মুসলিমের কোনো সম্পর্ক নেই।’ [ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা]
.
যারা ভুলক্রমে শুভ-অশুভ ইত্যাদি কোনো শির্কি কথা বলে ফেলবে, সে অনুশোচনাবোধ করবে এবং কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হিসেবে পড়বে—
.
اللَّهُمَّ لَا خَيْرَ إِلَّا خَيْرُكَ، وَلَا طَيْرَ إِلَّا طَيْرُكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
.
[আল্লা-হুম্মা লা খাইরা ইল্লা খায়রুকা, ওয়ালা ত্বয়রা ইল্লা ত্বয়রুকা, ওয়া-লা ইলা-হা গাইরুকা]
.
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই; আপনার শুভাশুভত্ব ছাড়া কোনো শুভ-অশুভ নেই এবং আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই। [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৭০৪৫; হাদিসটি সহিহ]
.
আমাদের উচিত, অন্তত নিজের ফ্যামিলির যেসব সদস্য অজ্ঞতাবশত এরকম ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস লালন করছেন, তাদেরকে সতর্ক করা। পাশাপাশি নিজের পরিচিত-অপরিচিত সবার কাছেই এই বিভ্রান্তিকর বিশ্বাসের ব্যাপারে সতর্ক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। তবে তা করতে হবে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে।