ইসলামী দৃষ্টিতে ভিন্ন জাতির সাথে সাদৃশ্য বর্জন

ইসলামে ভিন্ন জাতির সাথে সাদৃশ্য বর্জন করে স্বকীয়তা রক্ষা করার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম এটাকে তার মৌলিক মিশন হিসেবে দেখে যে, ইসলামের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবনকাঠামো হবে স্বকীয় ও অন্য সকল মনগড়া পথ ও মত থেকে অনন্য।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন তখন দেখেন, মদিনাবাসী বছরে দুই দিন উৎসব করে। নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এই দুই দিন আনন্দ-ফুর্তি করো কেন? তারা বলল, জাহেলি যুগে এ দুইটি দিনে আমরা আনন্দ-উৎসব করতাম, খেলাধুলা করতাম। নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 

إِنّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ.

‘আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এ দুটি দিনের পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন : ঈদুল আজহা ও ঈদুর ফিতর।’ 

দেখুন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলি দিনের উৎসব দিবস থেকে মুসলিমদের স্বকীয় ও বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাদের উৎসবের দিন পরিবর্তন করে দিলেন। মুসলিমদের অন্য ভিন্ন দুটি উৎসব দিবসকে শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত করে দিলেন। কারণ একটাই, যেন জাহেলি সভ্যতার সাথে মুসলিমদের কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা না থাকে। 

মুসলিমদের আত্মপরিচয়ের স্বকীয়তা রক্ষার গুরুত্ব ফুটে ওঠে আজানের বিধান আসার প্রেক্ষাপটে। মক্কায় থাকাকালীন মুসলিমরা আজান ছাড়াই নামাজ আদায় করত। মদিনায় আসার পর আজানের বিধান আসে। 

সকল মুসলিমকে সমবেত করে জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য এমন কিছুর প্রয়োজন ছিল, যা শুনে বা দেখে মুসলিমরা মিলিত হবে। একদিন সাহাবিদের মাঝে পরামর্শ হয়। কেউ বলল, নাসারাদের ঘণ্টার মতো আমরাও ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারি। কেউ বলল, ইহুদিদের মতো শিঙ্গা ব্যবহার করতে পারি।

কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এসব মতামত প্রত্যাখ্যান করলেন। কারণ এগুলো ভিন্ন জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে, যা মুসলিম জাতির আত্মপরিচয় ও স্বকীয় অবস্থানের জন্য হুমকিজনক। এরপর আবদুল্লাহ বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা স্বপ্নযোগে আজানের শব্দগুলো প্রাপ্ত হন আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সেগুলো সত্যায়ন করেন এবং বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আজানের দায়িত্ব দেন। এখানে আজানের পুরো ঘটনা বর্ণনা করা আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের আলোচনার জন্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সাদৃশ্য বর্জনের ক্ষেত্রে ইসলামের কঠোর অবস্থান।

অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের সাথে কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা যেন তৈরি না হয় সে ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব সতর্ক ছিলেন। একজন সাহাবি হিজাজের প্রসিদ্ধ এক স্থানে তার মানতের পশু জবেহ করার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফতোয়া চাইলেন। 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কাজের বৈধতা দেওয়ার আগে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়ে নিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সেখানে কি কাফেরদের কোনো উৎসব পালিত হয়? সাহাবি বললেন, জি না। এবার নিশ্চিত হয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেখানে মানতের পশু জবেহ করার অনুমোদন দিলেন। 

এ ছাড়াও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুশরিকদের সংস্কৃতির বিপরীতে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা যদি ঈমানে কালিমার দিকে খেয়াল করি, তাহলে দেখব যে সেখানে বর্জনের ব্যাপারে অগ্রাধিকার রয়েছে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। নেই কোনো মাবুদ (ইবাদতের উপযুক্ত) আল্লাহ ছাড়া। ঈমান কেবল আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার নামই নয়, বরং আল্লাহর সাথে আরও যেসব জিনিসের উপাসনা মানুষ করে, সেগুলোর প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকৃতি জানানোও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এজন্যই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, 

 فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

‘যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ 

[সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৬] 

আয়াতে আল্লাহ তাআলা অস্বীকৃতি আগে এনেছেন। এখানে আমাদের আত্মপরিচয়ের জন্য বিশেষ শিক্ষা রয়েছে। আমরা যে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়ে মুসলিম আত্মপরিচয় ধারণ করেছি, সেখানে স্বকীয়তার গুরুত্ব অনেক বেশি। ভিন্ন জাতির নিদর্শন, চিন্তা, স্লোগানকে প্রত্যাখ্যান করা মুসলিম আত্মপরিচয়ের প্রধান একটি দাবি। 

সুত্র: আত্মপরিচয়ের সংকট ১, পৃষ্ঠা ১১৭- ১১৯

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.