‘রিজা বিল কাজা’ দ্বারা উদ্দেশ্য তাকদির কিংবা আল্লাহর ফয়সালার ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকা। দুনিয়ার জীবনে নিজের ওপর আপতিত যেকোনো পরিস্থিতি ও সিদ্ধান্তকে আল্লাহর ফয়সালা হিসেবে মেনে নেওয়া এবং সেটাকে কল্যাণকর মনে করা। এজন্য মুমিনের জীবনে রিজা বিল কাজা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান।
রিজা বিল কাজার অনুভূতি ছাড়া মুমিনের জীবনের কোনো প্রাণ নেই। মুমিন যখন রিজা বিল কাজা অবলম্বন করে তখন সে মূলত আল্লাহর ওপর আস্থা রাখে। আল্লাহর দয়া ও নেয়ামতের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকে। এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
মুমিন ঈমানের সাথে থাকলে চিরজীবনের জন্য নিশ্চিত থাকতে পারে যে, আল্লাহ তার জন্য কখনোই অকল্যাণ করবেন না; বরং সুখ হোক কিংবা দুঃখ, পছন্দ হোক কিংবা অপছন্দ, আল্লাহ তার জন্য সবকিছুই কল্যাণে রূপান্তরিত করবেন।
হয়তো দুনিয়াতে সে সেটা উপলদ্ধি করতে পারে না, কিন্তু পরকালে সে নিশ্চিত এর জন্য অফুরন্ত প্রতিদান লাভ করবে। দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ যখন মুমিনকে তার কাম্য জিনিস থেকে বিরত রাখেন তখন তিনি মূলত তাকে আরও মহাকল্যাণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন।
ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘বান্দা যদি তার রব সম্পর্কে ইনসাফের সাথে চিন্তা-ভাবনা করত, রবের দান-প্রতিদান সম্পর্কে ভাবত, তাহলে সে জানতে পারত যে দুনিয়া ও এর ভোগবিলাস থেকে তাকে বঞ্চিত করে তার রব যে অনুগ্রহ তার ওপর করেছেন, এটা তাকে দান করার চাইতেও বড়। কেননা এই বঞ্চিত করা মূলত দান করারই প্রাক-পদক্ষেপ।’
রিজা বিল কাজা এতই মর্যাদাবান বিষয় যে, স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুআয় এটি কামনা করতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে নিয়মিত রিজা বিল কাজার তাওফিক চেয়ে দুআ করতেন। তিনি বলতেন,
وَأَسْأَلُكَ الرِّضَا بَعْدَ الْقَضَاءِ
‘হে আল্লাহ, আপনার কাছে তাকদিরের ওপর সন্তুষ্টি কামনা করি।’
রিজা বিল কাজার প্রতিদানও অনেক মহান। উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
أن أم الدرداء كَانَتْ تَقُوْلُ: أَنَّ الرَّاضِيْنَ بِقَضَاءِ اللهِ الَّذِيْنَ مَا قضى لَهُمْ رَضَوا بِه، لَهُمْ فِي الْجَنَّةِ مَنَازِلا يَغْبِطُهُمْ بِهَا الشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
‘আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট হওয়া ব্যক্তি, যারা সর্বদাই আল্লাহর তাকদিরে সন্তুষ্ট হয়েছে, তাদের জন্য জান্নাতে এমন মর্যাদা হবে, যা দেখে কিয়ামত দিবসে শহিদরাও ঈর্ষা করবে।’
সুত্র : আত্মপরিচয়ের সংকট-১