পশ্চিমা সভ্যতা আসলে কি?

সাইয়েদ নদভী রহ. বলেন: পশ্চিমা সভ্যতা হল 'নয়া ইরতিদাদ'। অর্থাৎ পুরো পশ্চিমা সভ্যতা স্বতন্ত্র দীন। আমরা মনে করি সুপারন্যাচারাল কনসেপ্ট না থাকলে তা ধর্ম না। অথচ ব্যক্তি যা ধারণ করে, তাই ধর্ম। কেউ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম অস্বীকার করলে তার 'ধর্ম' হল ধর্মহীনতা। পশ্চিমা সভ্যতা সুপারন্যাচারালকে অস্বীকার করে, তাই 'ধর্ম' হওয়াটাও সে অস্বীকার করে। সে নিজেকে দাবি করে 'দর্শন' বা মতবাদ (ism) হিসেবে। 

আগেকার 'ধর্ম' আর এখনকার 'ধর্ম' শব্দদুটো এক না। আগে 'ধর্ম' মানেই ছিল তা পুরো জীবনকে প্রভাবিত করবে। ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র-যুদ্ধ-অর্থ-বিচার সকল ক্ষেত্রে যেটার গুরুত্ব সর্বাগ্রে, সেটাই ধর্ম। ইউরোপে সেটা ছিল পোপতান্ত্রিক খৃষ্টবাদ। আমাদের জন্য সেটা ছিল ইসলাম।  দীন মানে ধর্ম, এই বিচারে ততদিন অব্দি ঠিকই ছিল। দীন মানে জীবনব্যবস্থাপনা। ধর্ম ঠিক জীবনব্যবস্থাপনার কাজটাই করতো।

রেনেসাঁ হিউম্যানিজমের উদ্ভবের পর থেকে ওহী-ধর্মের গুরুত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো। এনলাইটেনমেন্ট যুগে ব্যক্তিপরিসর বাদে বাকিসব ধর্মমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হলো। ব্যক্তি চলবে চলুক ধর্ম দিয়ে। সমাজ-পরিবার-রাষ্ট্র-অর্থ-বিচার-যুদ্ধ এগুলো চলবে হিউম্যানিজম দিয়ে। সবার উপরে মানুষ, মানুষের কল্যাণ, মানবজনমের ভোগই সাফল্য। ধর্মকে বাদ দিয়ে কীভাবে এগুলো চলবে, কীসে সর্বোচ্চ কল্যাণ, তা বের করতে জন্ম নিল নানান মতবাদ (ism)। 

- পরিবার চলবে : ব্যক্তিবাদ, ক্যারিয়ারিজম, নারীবাদ দিয়ে।

- সমাজ চলবে: ব্যক্তিবাদ, বিচ্ছিন্নবাদ দিয়ে। 

- রাষ্ট্র চলবে: ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র দিয়ে।

- অর্থব্যবস্থা চলবে: পুঁজিবাদ, লিবারেল অর্থনীতি দিয়ে।

- বিচার চলবে: লিবারেল ইথিক্স ও মানবজ্ঞান দিয়ে।

- যুদ্ধ চলবে: দেশের জন্য, মতবাদের জন্য।

এর কোনোটাতে কেউ ধর্ম নিয়ে এলে সে বর্বর, মধ্যযুগীয়, খ্যাত। 

ধর্ম যখন দীন ছিল, তখন এগুলো সবই ধর্ম দিয়ে চলতো। আজকের ধর্মগুলোকে দীন বললে সঠিক চিত্রটা সামনে আসে না। ইসলাম যেমন দীন। এই পশ্চিমা সভ্যতাও তেমন দীন। স্বতন্ত্র ও পরিপূর্ণ দীন। আজকের ধর্ম শব্দটা আর আগেকার দীন শব্দটার অর্থ আর একই নেই। 

একই সাথে কেউ পশ্চিমা সভ্যতা ও ইসলামকে একসাথে ধারণ করতে পারে না। একইভাবে পশ্চিমা সভ্যতার কোনো উপাদান ধারণ করলে তাকে ইসলামী একটা উপাদান অস্বীকার করতে হবে, অদরকারী মনে করতে হবে বা অস্বীকার করার রাস্তা খুঁজতে হবে। 

- ভোটাভুটি/মিছিলমিটিং করলে কিতাল অস্বীকার

- গণতন্ত্র করলে খিলাফত-ইমারত অস্বীকার

- নারীবাদ করলে ইসলামী পরিবারব্যবস্থাপনা অস্বীকার

- ধর্মনিরপেক্ষতা করলে ওয়ালা-বারাআ, ইসলামী শাসনব্যবস্থা অস্বীকার

- ব্যক্তিবাদ করলে সৎকাজে আদেশ, অসৎকাজে নিষেধ অস্বীকার।

- ক্যারিয়ারিজম, পুঁজিবাদ, ভোগবাদ করলে সাদাসিধে জীবন, আখিরাত, দানখয়রাত অস্বীকার।

- বিবর্তনবাদ করলে আদমসৃষ্টি অস্বীকার

- বিজ্ঞানবাদ করলে ওহীর গুরুত্ব অস্বীকার

- বস্তুবাদ করলে আত্মা-রুহ, আখিরাত সব অস্বীকার

এভাবে পশ্চিমাসভ্যতার প্রতিটি উপাদান ইসলামের একেকটা আমল, আকীদা ও শাখাকে অস্বীকার করে। 

১ম প্রজন্ম একে একটা কৌশল হিসেবে নেয়। যেমন আলীগড়ীরা পশ্চিমা জ্ঞানতত্ত্বকে নিয়েছিল। আজ আমরা গণতন্ত্রকে নিচ্ছি।

২য় প্রজন্ম কৌশলটাকেই একমাত্র কৌশল এবং বাঁচার একমাত্র রাস্তা হিসেবে নেয়। ফলে ঐ টপিকে ইসলামের বিধানটা অপ্রাসঙ্গিক ও হাস্যকর হয়ে পড়ে। 

৩য় প্রজন্ম ঐ কৌশলটাকেই আরও জরুরি ধরে ইসলামের ছিটেফোঁটাও রাখতে চায় না। যেমন এবি পার্টি বা আন-নাহদা পার্টি। 

এজন্যই গণতান্ত্রিক মুসলিমরা ইসলামের নানান দিককে অপ্রাসঙ্গিক সাব্যস্ত করে। কাটছাঁট করে। টুপিদাড়ি থেকে নিয়ে খিলাফত - কিতাল - পর্দা সবকিছুই। দীন উদ্ধার করতে গিয়ে দীনকেই পঙ্গু করে বসে। 

গণতন্ত্র স্বতন্ত্র দীন না হতে পারে। তবে গণতন্ত্র আরেকটা ভিন্নধর্মের (পশ্চিমাসভ্যতা) একটা গুরুত্বপূর্ণ আকীদা। যে রাস্তা আমাদেরকে ঐ দীনের দিকেই নেবে। কৌশল হিসেবে নিলেও এটা ৩ প্রজন্ম পরে আর কৌশল থাকে না। আকীদাই হয়ে যায়। আমাদের সামনেই এর প্রমাণ আছে।

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.