১৫ রামাজান শুক্রবার আসমান থেকে একটি বিকট আওয়াজ আসবে হাদীসের তাহক্বীক্ব

১৫ রামাজান শুক্রবার আসমান থেকে একটি বিকট আওয়াজ আসবে হাদীসের তাহক্বীক্ব :


আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ  (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

عن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا كان صيحة في رمضان فإنه يكون معمعة في شوال، وتمييز القبائل في ذي القعدة، وتسفك الدماء في ذي الحجة والمحرم وما المحرم – يقولها ثلاث مرات هيهات هيهات! يقتل الناس فيه هرجا هرجا، قلنا وما الصيحة يا رسول الله؟ قال: هدة في النصف من رمضان ليلة الجمعة فتكون هدة توقظ النائم وتقعد القائم وتخرج العواتق من خدورهن في ليلة جمعة في سنة كثيرة الزلازل والبرد، فإذا وافق شهر رمضان في تلك السنة ليلة الجمعة فإذا صليتم الفجر من يوم الجمعة في النصف من رمضان فادخلوا بيوتكم وأغلقوا أبوابكم وسدوا كواكم ودثروا أنفسكم وسدوا آذانكم، فإذا أحسستم بالصيحة فخروا لله سجدا وقولوا: سبحان القدوس، سبحان القدوس، ربنا القدوس، فإنه من فعل ذلك نجا ومن لم يفعل هلك.انتهى

অর্থ : " যখন রমযান মাসে বিকট আওয়াজ প্রকাশিত হবে, শাওয়াল মাসে যুদ্ধের ঝংকার শুনবে, জিলকদ মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে মতপার্থক্য দেখা দিবে, জিলহজ্ব মাসে রক্তপাত হবে। মুহাররম মাসে, মুহাররম কি? সে মাসে বিভিন্ন ধরনের মারামারি, হানাহানি, ঝগড়া-ফাসাদ চলতে থাকবে। 

একথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জায়হাহ্ কি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (দঃ) বললেন, এটা অর্ধ রমাযান মাসের জুমার রাত্রে প্রকাশ পাবে। যার কারণে ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জাগ্রত হয়ে যাবে, দাড়ানো অবস্থায় থাকা লোকজন বসে যাবে, কুমারী নারীগন ভয়-আতঙ্কে পর্দার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে। এটা হবে এক জুমার রাত্রিতে, এমন এক বৎসর যখন অধিকহারে ভুমিকম্প হবে। সুতরাং তোমরা জুমার দিন নামায আদায় করার সাথে সাথে ঘরে প্রবেশ করে দরজা-জানালা লাগিয়ে দিবে। নিজেদেরকে চাদরাবৃত করলেও কানকে সজাগ রাখবে। যখনই বিকট কোনো আওয়াজ শুনতে পাবে তখনই আল্লাহর দরবারে সেজদাবনত হয়ে যাবে এবং সুবহানাল কুদ্দুছ, সুবহানাল কুদ্দুছ বলতে থাকবে।"

তাখরীজ : 

নুয়াইম বিন হাম্মাদ, আল ফিতান, হা/৬৩৮;

মুসনাদু শাশী, হা/৮৩৭

যুরযানী, তারতিবুল আমালী,হা/ ১৪৪২; 

হিন্দী, কানজুল উম্মাল, হা/ ৩৯৬২৭; 

সূয়ুতী,জামেউল আহাদিস, হা/ ৪০১১০)

সনদ হলো-

-حَدَّثَنَا أَبُو عُمَرَ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ حُسَيْنٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ الْحَارِثِ الْهَمْدَانِيِّ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:

(নুয়াইম ইবনু হাম্মাদ, আল-ফিতান, ১/২২৮ পৃ. হা/৬৩৮)

তাহক্বীক্ব : হাদীসটি জাল মিথ্যা 

১| ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহ) (মৃত:৫৫৭ হি:) 

বর্নণাটি উল্লেখ করে বলেন এটি বানোয়াট এবং মিথ্যাভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আরোপিত করা হয়েছে। (আল মাউযুআত:৩/১৯১ হা/১৬৮৭)

২| ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮) বলেছেন,এ বর্ননাটি বাতিল। (তারতীবুল মাউযুআত, ২৭৮)

৩| ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, অগ্রিম তারিখ নির্ধারণ করে বিভিন্ন ঘটনার ঘটার বেশ কিছু হাদিস পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো সহিহ নয়।(আল মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা: ৯৬) 

৪| ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৪২০ হি.) এটি বানোয়াট। (সিলসিলা যঈফা হা/ ৬০৭৮ ও ৬০৭৯ আলোচনা দষ্টব্য) 

৫| আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত: ১৪২০ হি.) বর্ননাটি উল্লেখ করে জাল বলেছেন। (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া,২৬/৩৩৯-৩৪১)

|•|•|•|•|•|•|•|•|•|•|

তাহক্বীক্ব : এই হাদিস জাল বানোয়াট হওয়ার  কারণ তিনজন রাবীর সমস্যা আছে। 

[১ম রাবী :]

ইবনু লাহিয়াহ' হাফিয ইবনু কাসীর “আস-সীরাহ” গ্রন্থে (১/২৭২) বলেনঃ তিনি (ইবনু লাহিয়াহ) যঈফ 

ইবনু লাহিয়াহর সমালোচনা দেখতে পড়ুন।  (ইমাম যাহাবী, রহ- মিযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং- ৪৫৩০)

[২য় রাবী :]

আবদুল ওহহাব ইবনু হুসাইন 

ইনি ইবনু লাহিয়াহ উস্তাজ ‘আবদুল ওহহাব ইবনু হুসাইন’ مجهول এবং তার বর্নিত হাদীস জাল।

১| ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) তার একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, হাদিসটি জাল বানোয়াট। (লিসানুল মিযান,রাবী নং- ৪৯৭৯ ,ইমাম ইবনু হাজার) 

ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রহ. مجهول  অজ্ঞাত রাবী বলেছেন। (আসকালানী: লিসানুল মিযান, রাবী নং ১৬২)

২| ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন- مجهول -“তিনি অজ্ঞাত। (লিসানুল মিযান, ৫/৩০৩ পৃ. রাবী নং- ৪৯৭৯,ইমাম ইবনু হাজার)

[৩য় রাবী :] 

মুহাম্মদ ইবনু সাবিত আল-বুনানী

মুহাদ্দেসীনদের ঐক্যমতে তিনি অত্যন্ত যঈফ রাবি। অনেকেই তার হাদিসকে জাল বানোয়াট বলেছেন। 

১| ইমাম ইবনু মাঈন (রহ.) বলেন- ليس بشئ. -“তার হাদিস কিছুই নয়।” ( আল-কামিল ফি যুওয়াফার রিজাল, রাবী নং-১৬৩৮,ইমাম ইবনু আদী)

 ২| ইমাম বুখারী (২৫৬ হি.) বলেন, তার হাদিসে আপত্তি রয়েছে। (মিযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং- ৭২৯৪,ইমাম যাহাবী)

৩| ইমাম নাসাঈ (রহ.) বলেন, তিনি যঈফ রাবী। ইমাম ইবনু আদী (রহ.) বলেন, তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। (তাহজিবুল কামাল, রাবী নং-৫১০০,ইমাম মিযযী; আল-কামিল ফি যুওয়াফার রিজাল, রাবী নং-১৬৩৮,ইমাম ইবনু আদী)

৪| ইমাম ইবনু হিব্বান (৩৫৬ হি.) তার বিষয়ে লিখেন-

 لَا يَجُوز الِاحْتِجَاج بِهِ -

“তার হাদিস দিয়ে দলীল দেয়া বৈধ নয়।” (আল-মাজরুহীন, রাবী নং- ৯২৮,ইমাম ইবনু হিব্বান)

৫| ইমাম ইবনু আবি হাতেম (৪৫৪ হি.) বলেন-

 وَقَال أَبُو حاتم  : منكر الْحَدِيث، يكتب حديثه ولا يحتج بِهِ. -“

তিনি আপত্তিকর হাদিস বর্ণনাকারী, যদিও তার হাদিস লিখতাম তবে তার হাদিস দলীল দেয়ার উপযোগী নয়।” ( তাহজিবুল কামাল, রাবী নং- ৫১০০,ইমাম মিযযী)

৬| ইমাম ইবনু কায়সারানী (৫০৭ হি.)  রাবির একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন- 

فِيهِ مُحَمَّد بن ثَابت الْبنانِيّ لَيْسَ بِشَيْء فِي الحَدِيث.

 -“সনদে মুহাম্মদ ইবনু ছাবিত আল-বুনানী নামক রাবি রয়েছেন,তার হাদিস কিছুই নয়।(মা‘রিফাতুল তাযকিরাহ ফি আহাদিসিল মাওদ্বুআত, রাবী নং-৪৮৮)

৭| ইমাম যাহাবী (৭৪৮ হি.) বলেন- ضعفه جماعة -“একজামাত ইমামগণ তাকে দুর্বল বলেছেন। (ইমাম যাহাবী, দিওয়ানুদ দ্বুআফা, ১/৩৪৪ পৃ. রাবী নং- ৩৬২৩)

আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত: ১৪২০ হি.) বর্ননাটি উল্লেখ বলেছেন।

       এই হাদীছের কোন যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই; বরং এটা মিথ্যা এবং বানোয়াট। মুসলিমরা বহু বছর দেখেছে যে শুক্রবারের আগের রাতে রমজানের মাঝামাঝি পড়েছিল, কিন্তু এই বিস্ফোরণের মিথ্যা বর্ননা যা উল্লেখ করা হয়েছে তা ঘটেনি আল্লাহর প্রশংসা। সুতরাং যে কেউ এই মিথ্যা  শব্দগুলি দেখতে পাবে তার জানা উচিত যে, এই মিথ্যা হাদীসটি প্রচার করা জায়েজ নয়। বরং এই মিথ্যা বর্ননার সেই কাগজ ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে এবং মানুষকে সচেতন করতে হবে যে এটা মিথ্যা। এটা সুপরিচিত যে, মুসলমানকে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং তার জীবনের শেষ অবধি আল্লাহ যা হারাম করেছেন সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে.....বিস্তারিত দেখুন ইমাম বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড:২৬ পৃষ্ঠা:৩৩৯-৩৪১) 

পরিশেষে,মহান আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের জাল জয়ীফ হাদিস বর্ণনা এবং প্রচার করা থাকে হেফাজত করুক সাথে ভ্রান্ত আলেমদের থেকে দূরে রাখুক আমীন।

________________________

* ব্রাদার রাহুল হোসেন

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.