কোনো অমুসলিম ভালো কাজ করলেও কি জাহান্নামে যাবে? আইনস্টাইন, মেন্ডেলার মতো ব্যক্তিরাও কি জাহান্নামে যেতে পারেন?
▬▬▬▬▬▬▬❖▬▬▬▬▬▬▬প্রথমেই আমরা একটি হাদিস বর্ণনা করছি। আইয়ামে জাহেলিয়ার (ইসলামপূর্ব মূর্খতার যুগ) সময়ে ইবনে জুদ‘আন নামের এক ব্যক্তি মানুষের ব্যাপক উপকার করতেন। কিন্তু তিনি ঈমান না নিয়েই মৃত্যুবরণ করেন।
.
একদিন আয়িশা (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! জাহেলি যুগে ইবনে জুদ‘আন আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করতেন, গরিব-মিসকিনদের খাবার খাওয়াতেন; এই সব কাজ তার কোনো উপকারে আসবে কি?’ নবিজি উত্তরে বললেন, ‘‘না, এসবে তার কোনো উপকার হবে না; কারণ সে কোনোদিন বলেনি—
رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ.
‘হে আমার রব! বিচারের দিনে আমার গোনাহ-খাতা মাফ করে দিও!’ ’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪০৬]
.
হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, ‘সে আখিরাতকে সত্য সাব্যস্ত করতো না, তাই সে কা*'ফির; সুতরাং তার ভালো কাজগুলো তাকে উপকার পৌঁছাবে না।’ [শারহু মুসলিম: ৩/৮২]
.
তবে, আল্লাহ্ চাইলে তার শাস্তি কিছুটা কমাতে পারেন কিংবা তাকে হয়তো তার ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব, কেউ যদি ঈমানহীন অবস্থায় মারা যায়, তবে সে জাহান্নামে যেতে হবে। মেন্ডেলা, এডিসন, টেসলা, ফ্লেমিং, লুই পাস্তুর বা হাতেম তায়ির মতো মানবহিতৈষী (Philanthropist) কেউ যদি ঈমান না এনে মারা যান, তবে তাদেরও একই পরিণতি হবে।
.
অন্যের প্রতি সহানুভূতি জানানো, কারও দুঃখ দূর করা, মা-বাবার সেবা করা, সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত থাকা, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ইত্যাদি ভালো কাজের প্রতিদান হয়তো দুনিয়ার জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভের মাধ্যমে দেওয়া হবে (সহিহ মুসলিম) অথবা পরকালে শাস্তি হালকা হওয়ার মাধ্যমে (এটি বাযযারের বর্ণনায় এসেছে, যদিও হাদিসটি মুনকার)।
.
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ‘‘কোনো কা*'ফি'র যদি দুনিয়াতে কোনো নেক আমল করে, তবে এর প্রতিদানস্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৯৮৩]
.
কিন্তু, কোনো অমুসলিম পরকালের চিরস্থায়ী নাজাত (মুক্তি)—কুরআনের ভাষায় চূড়ান্ত সফলতা—কখনই পাবে না। কেননা, পরকালে নাজাতের জন্য ‘ঈমান’ পূর্বশর্ত। এ ব্যাপারে উম্মাহ একমত। [আল্লামা কাশ্মিরি, ফায়দ্বুল বারি: ১/১৩৬, ইমাম নববি, শারহু মুসলিম: ৩/৮৭]
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন তালাশ করলে, তা কখনো তার কাছ থেকে কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাল (রা.)-কে আদেশ দেন, তিনি যেন বলেন, ‘‘কোনো মুসলিম ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৩০৬২]
.
ভালো কাজ করার মাধ্যমে আখিরাতে উপকৃত হওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের ‘শর্ত’ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘ঈমানদার অবস্থায় যে ভালো কাজ করবে—সে পুরুষ হোক বা নারী—তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করবো এবং তারা (দুনিয়াতে নেক আমল) যা করতো, তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে (আখিরাতে) উত্তম প্রতিদান দেবো।’’ [সুরা নাহল, আয়াত: ৯৭]
.
তবে, যদি কোনো অমুসলিম দুনিয়ায় থাকতে ইসলাম সম্পর্কে না জানতে পারে এবং কেউ তাকে ইসলামের দাওয়াত না পৌঁছায়, তাহলে তার বিষয়টি পেন্ডিং থাকবে। আল্লাহ তাকে হাশরের দিন পরীক্ষা করবেন। আল্লাহ কাউকে বিনা কারণে শাস্তি দেবেন না। [শায়খ মুনাজ্জিদ এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন তাঁর islamqa(.)info-তে] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘(ঐশীবাণীর) বার্তাবাহক না পাঠিয়ে আমি কখনই কাউকে শাস্তি দিই না।’’ [সুরা ইসরা, আয়াত: ১৫]
.
সুতরাং, প্রিয় ভাই-বোনেরা! নিজের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করুন। এই ঈমানের মূল্য দুনিয়ার কোনো কিছুর সমান হবে না। আল্লাহর দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো ঈমান। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন, ঈমানের কদর করুন।
.
আমরা কোনো অমুসলিমের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা রাখবো না (এ ব্যাপারে আলাদা একটি পর্ব আসবে, ইনশাআল্লাহ)। তবে, আমরা তাদের ভালো কাজের প্রশংসা করবো, তাদের সাথে সদাচরণ করবো, তাদের সাথে স্বাভাবিক লেনদেনও করবো; কিন্তু কখনই তাদের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন করবো না, তারা মারা গেলে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করবো না, RIP (Rest in peace) লিখে শোক জানাবো না।