বিশ্ব নোংরামী দিবসঃ ইতিহাস ও করণীয়

বিশ্ব নোংরামী দিবসঃ ইতিহাস ও করণীয়


প্রতিবছর ১৪ই ফেব্রুয়ারী পালিত হয় বিশ্ব ভালবাসা দিবস। হিংসা-হানাহানির যুগে ভালবাসার এই দিনকে(?) উদযাপন করতে প্রেমিক যুগল তাই উপেক্ষা করে সব চোখ রাঙানি। 

কিন্তু একজন মুসলিম তথা আত্মসমর্পণকারী হিসেবে আমাদের কি করণীয়? আগে ইতিহাস টা জেনে নেয়া যাকঃ-

‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস সুপ্রাচীন। এর সূচনা প্রায় ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালবাসা’র মধ্য দিয়ে। এর সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে রোমীয় খৃষ্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। ভ্যালেনটাইন ডে সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন- 

১. রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন সম্রাটের খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আহবান প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। 

২. ১৪ই ফেব্রুয়ারী রোমকদের লেসিয়াস দেবীর পবিত্র দিন। এদিন তিনি দু’টি শিশুকে দুধ পান করিয়েছিলেন। যারা পরবর্তীতে রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিল। 

৩. ১৪ই ফেব্রুয়ারী রোমানদের বিবাহ দেবী ‘ইউনু’-এর বিবাহের দিন। 

৪. রোম সম্রাট ক্লডিয়াস তার বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে গিয়ে যখন এতে বিবাহিত পুরুষদের অনাসক্ত দেখেন, তখন তিনি পুরুষদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ করে ফরমান জারী করেন। কিন্তু জনৈক রোমান বিশপ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন ও গোপনে বিয়ে করেন। সম্রাটের কানে এ সংবাদ গেলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সেদিন থেকে দিনটি ভালবাসা দিবস হিসাবে কিংবা এ ধর্মযাজকের নামানুসারে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

বর্তমান অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে স্যাটেলাইটের কল্যাণে মুসলিম সমাজ পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণ করছে। নিজেদের স্বকীয়তা-স্বাতন্ত্র্যকে ভুলে গিয়ে, ধর্মীয় অনুশাসনকে উপেক্ষা করে তারা আজকে প্রগতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে তাদের কর্মকান্ডে মুসলিম জাতির উঁচু শির নত হচ্ছে। অথচ এটা বহুপূর্বে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করে গেছেন।

🔰রাসূল সাঃ বলেছেন, নারী-পুরুষের গোপন মিলনে শয়তান তাদের সঙ্গী হয় (তিরমিজি) (নাজায়েজ মিলনে) 

🔰রাসূল সাঃ বলেছেন, কেউ যদি এমন কোনো কাজ করে যা আমাদের শরীয়তের বাহিরে তাহলে তা বর্জনীয় (সহীহ মুসলিম) 

🔰ছাহাবী আবু অকেদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) খায়বার যাত্রায় মূর্তিপূজকদের একটি গাছ অতিক্রম করলেন। তাদের নিকট যে গাছটির নাম ছিল ‘জাতু আনওয়াত’। এর উপর তীর টানিয়ে রাখা হ’ত। এ দেখে কতক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্যও এমন একটি ‘জাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। রাসূল (ছাঃ) ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, ‘সুবহানাল্লাহ, এ তো মূসা (আঃ)-এর জাতির মত কথা। আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন, তাদের প্রভুর ন্যায়। আমি নিশ্চিত, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার-অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে’ (মিশকাত হা/৫৪০৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬০১)। 

🔰অন্যত্র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে’ (আবূ দাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)। 

তাহলে, কাফি-রদের সংস্কৃতি/অনুষ্ঠানের অনুকরণ আমাদের জন্যে ধ্বংসাত্মক - সেব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। 

মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণপ্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ বিচারে এটি গর্হিত, নিন্দিত, হারাম। বিশেষ করে অনুকরণীয় বিষয় যদি হয় আক্বীদা, ইবাদত, ধর্মীয় আলামত বিরোধী, আর অনুকরণীয় ব্যক্তি যদি হয় বিধর্মী, বিজাতী। দুর্ভাগ্য যে, মুসলমানরা ক্রমশ ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে আসছে এবং বিজাতীদের অনুকরণ ক্রমান্বয়ে বেশী বেশী আরম্ভ করছে। যার অন্যতম হ’ল ১৪ই ফেব্রুয়ারী বা ভালবাসা দিবস। মুসলমানদের জন্য এসব দিবস পালন জঘন্য অপরাধ।

⭕পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,  

"যারা চায়, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, তাদের জন্য দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ (সবকিছু) জানেন, তোমরা জান না।" (সূরা নূর, আয়াত ১৯)  

.

"ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। এটা একটা খারাপ কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ।" (সূরা বণী ইসরাইল, আয়াত ৩২)


অনেক লোক অবচেতনভাবেই এ সকল অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, অথচ তারা জানেও না, কত বড় অপরাধ তারা করে যাচ্ছে। শিরক ও কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, ধন্যবাদ দিচ্ছে। এভাবে আল্লাহর শাস্তিতে নিপতিত হচ্ছে।

.

মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও কাফিরদের সাথে সম্পর্ক ছেদন হচ্ছে মুসলমানদের একটি বৈশিষ্ট্য। সুতরাং আমাদের উচিত ও কর্তব্য, মুসলমানদের মুহাববত করা, কাফি-রদের ঘৃণা করা, তাদের সাথে বৈরীভাব পোষণ করা এবং তাদের আচার-অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করা। এতেই আমরা নিরাপদ, এখানেই আমাদের কল্যাণ, অন্যথা সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

কেউ কেউ হয়তো বলবে, আমরা তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস গ্রহণ করি না, শুধু আপোষে মুহাববত-ভালবাসা তৈরি করার নিমিত্তে এ দিনটি পালন করি। অথচ এর মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতা ছড়ায় এবং ব্যভিচার প্রসার লাভ করে। একজন সতী-সাধ্বী ও পূতঃপবিত্র মুসলিম নারী বা পুরুষ এ ধরনের নোংরামীর সাথে কখনো জড়িত হতে পারে না।

.

এ দিনটি উদ্যাপন কোন স্বভাব সিদ্ধ ব্যাপার নয়। বরং ছেলেমেয়েদের হারাম সম্পর্কে জুড়ে দেয়ার পাশ্চাত্য কালচার আমদানীকরণ। আমরা জানি, তারা সমাজকে চারিত্রিক পদস্খলন ও বিপর্যয় হ’তে রক্ষা করার জন্য কোন নিয়ম-নীতির ধার ধারে না। যার কুৎসিত চেহারা আজ আমাদের সামনে স্পষ্ট। তাদের অশালীন কালচারের বিপরীতে আমাদের অনেক সুষ্ঠু-শালীন আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে।

মুসলিম সমাজে এক সময় নীতি-নৈতিকতার মূল্য ছিল সীমাহীন। লজ্জাশীলতা ও শুদ্ধতা ছিল এ সমাজের অলংকার। কোন অপরিচিত মেয়ের সাথে রাস্তায় বের হবার চেয়ে পিঠে বিশাল ভার বহন করা একটা ছেলের জন্য ছিল অধিকতর সহজ। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তা চিন্তা করারও অবকাশ ছিল না। অথচ সেই অবস্থা থেকে আজ আমরা কোথায় এসে পৌঁছেছি! 

.

আর খবরে প্রত্যেকদিনই এখানে-সেখানে নবজাতক রাস্তায় ফেলে যাওয়ার সংবাদ দেখা যাচ্ছে! এটা হচ্ছে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র মত বেহায়াপনার কুফল। এসবের দ্বারা সরল, পুণ্যবান, নিষ্কলঙ্ক মানুষ বিপথগামী হচ্ছে।

.

পরিশেষে বলব, 

বিজাতীয় এহেন বাতিল সংস্কৃতি থেকে আমাদের মুসলিমদের সাবধান হয়ে এসমস্ত হারাম বর্জন করা আবশ্যক।

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.