নাভির নিচে হাত বাধা হাদীসের তাহকিক:
১| মুকাল্লিদ সাহেব কিছু লেখালেখি করছেন। কিন্তু আমি উস্তাদের লেখাগুলো পয়েন্ট বায় পয়েন্ট জবাব দিয়ে দুইটি পর্ব লিখেছি। আমার উক্ত প্রবন্ধের গুলির বিন্দু পরিমাণ জবাব না দিয়ে। নতুন দলিল এবং দাবী উপস্থাপন করেছেন এটা অনেক হতাশাজনক।
ইমাম বায়হাকী রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৪৫৮ হি.) বলেছেন,
আনাস রাযিআল্লাহু আনহুর হাদীস
أخبرنا أبو الحسن بن الفضل ببغداد، أنبا أبو عمر بن السماك، ثنا محمد بن عبيد الله بن المنادي، ثنا أبو حذيفة ثنا سعيد بن زَرْبِي عَن ثَابت عَن أنس قَالَ : من أَخْلَاق النُّبُوَّة تَعْجِيل الْإِفْطَار وَتَأْخِير السّحُور ووضعك يَمِينك على شمالك فِي الصَّلَاة تَحت السُّرَّة-
রাসূলের সাহাবী আনাস রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা আছে যে, তিনি বলেছেন, ‘দ্রুত ইফতার করা, সেহরীতে দেরী করা এবং নামাযে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে নাভীর নিচে স্থাপন করা নবীদের আখলাক ছিল’। [. বায়হাকী, খিলাফিয়াত ২/২৫৩-২৫৪।]
উস্তাদ হাদীস টির রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন তাবরাণী মুজামুল কাবীরের। কিন্তূ অনুসন্ধান করে আমি তাবরাণী মুজামুল কাবীরে উক্ত হাদিসের সনদ মতন কিছুই পাইনি। পেয়েছি ইমাম বায়হাকী রহ খিলাফিয়াত ২/২৫৩-২৫৪। উস্তাদ যদি তাবরাণী মুজামুল কাবীরের উক্ত হাদীস পেয়ে থাকেন। তাহলে স্ক্রিন সর্ট দিয়ে পোস্ট করবেন।
তাহকীক : এ বর্ণনাটি মওযূ ও মনগড়া। এতে সাঈদ বিন যারবী নামক একজন রাবী রয়েছেন। তিনি মাতরূক, অত্যন্ত সমালোচিত। মুহাদ্দিসগণ তাকে মওযূ ও মনগড়া হাদীস বর্ণনাকারী আখ্যায়িত করেছেন। নিচে তার সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের উক্তিসমূহ পেশ করা হল।-
১) ইমাম ইবনু মাঈন রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৩৩ হি.) বলেছেন, ‘সাঈদ বিন যারবী কিছুই নন’। [. তারীখে ইবনু মাঈন (দূরীর বর্ণনা) ৪/৮৮।]
২) ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৫৬ হি.) বলেছেন, ‘তিনি শক্তিশালী ছিলেন না’। [. বুখারী, আত-তারীখুল কাবীর ৩/৩৬৯।]
তিনি আরও বলেছেন, ‘তিনি আজব ও অদ্ভূত বর্ণনা উদ্ধৃত করতেন’। [. ঐ ৩/৪৭৩।]
৩) ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৭৫ হি.) বলেছেন, ‘তিনি আজব ও অদ্ভূত বর্ণনা উদ্ধৃত করতেন’। [. মুসলিম, আল-কুনা ওয়াল-আসমা ২/৭৫৮।]
৪) ইমাম আবূ দাঊদ রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৭৫ হি.) বলেছেন, ‘তিনি যঈফ রাবী’। [. সুওয়ালাতে আবূ উবাইদ আল-আজুর্রী পৃ. ৩১০।]
৫) ইমাম আবূ হাতেম আর-রাযী রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৭৭ হি.) বলেছেন, ‘সাঈদ বিন যারবী যঈফুল হাদীস, মুনকারুল হাদীস। তার কাছে আজীব ও গরীব মুনকার বর্ণনা রয়েছে’। [. ইবনু আবী হাতিম, আল-জারহু ওয়াত-তাদীল ৪/২৩।]
৬) ইমাম ইয়াকূব বিন সুফিয়ান আল-ফাসাবী রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৭৭ হি.) বলেছেন, ‘সাঈদ বিন যারবী যঈফ রাবী’। [. ফাসাবী, আল-মারিফাতু ওয়াত-তারীখ ২/৬৬০।]
৭) ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৩০৩ হি.) বলেছেন, ‘সাঈদ বিন আবী যারবী আবূ মুআবিয়া সিকাহ রাবী নন’। [. নাসাঈ, আয-যুআফা ওয়াল-মাতরূকূন পৃ. ৫৩।]
৮) ইমাম ইবনু হিববান রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৩৫৪ হি.) বলেছেন, ‘তিনি অল্প বর্ণনা উদ্ধৃতকারী হওয়ার সাথে সাথে সিকাহ রাবীদের থেকে মওযূ ও মনগড়া বর্ণনা উদ্ধৃত করতেন’। [. আল-মাজরূহীন ১/৩১৮।]
৯) ইমাম ইবনু আদী রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৩৬৫ হি.) বলেছেন, ‘তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে এমন সব হাদীস বর্ণনা করতেন যেগুলির মুতাবাআত কেউ করতেন না। তার বর্ণিত অধিকাংশ হাদীসই এমন’। [. আল-কামিল ৪/৪১২।]
১০) ইমাম আবূ আহমাদ আল-হাকেম রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৩৭৮ হি.) বলেছেন, ‘তিনি খুবই মুনকারুল হাদীস’। [. ইবনু হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ৪/২৮।]
১১) ইমাম দারাকুতনী রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৩৮৫ হি.) বলেছেন, ‘তিনি মাতরূক রাবী’। [. দারাকুতনী, আয-যুআফা ওয়াল-মাতরূকূন ২/১৫৬।]
১২) ইমাম ইবনু হামকান (মৃ. ৩৮০ হি. পূর্বে) এবং ইমাম বুরকানী রহিমাহুল্লাহও (মৃ. ৪২৫ হি.) ইমাম দারাকুতনীর এ কথাটির সাথে একমত হয়েছেন। [. মুকাদ্দামা কিতাব আয-যুআফা ওয়াল-মাতরূকূন পৃ. ৬৩।]
১৩) ইমাম বায়হাকী (মৃ. ৪৫৮ হি.) বলেছেন, ‘তিনি যঈফ’। [. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা ১/৫৬৩।]
এছাড়াও তিনি তার অন্য একটি গ্রন্থে বলেছেন, ‘সাঈদ বিন যারবী যঈফ রাবীদের অন্যতম’। [. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান ৪/৩২৪।]