সালাতে হাত বাধা হাদীসের তাহকিক : পর্ব -২


১| মুকাল্লিদ সাহেব বুকের উপরে হাত বাধা মাকরুহ দাবী করেছিলেন।  তার জবাবে আমি এক‌টি প্রবন্ধ লিখে উক্ত দাবী কে দাফন  করে দিয়েছি প্রথম পর্বে। কিন্তু মুকাল্লিদ সাহেব আমার উক্ত প্রবন্ধের বিন্দু পরিমাণ  জবাব না দিয়ে। নতুন দলিল এবং দাবী উপস্থাপন করেছেন। এটা অনেক হতাশাজনক। 

২|| মুকাল্লিদের দলিলের জবাব : 

উস্তাদ আপনার দলিল এবং অনুবাদ  অনুযায়ী  আলি রাযি "নাভির উপরে" হাত বাধতো প্রমাণ হয়। তাতে হানাফীদের এতো খুশী হওয়ার কিছুই নায়। কারণ হানাফীদের দাবী "নাভির নিচে" হাত বাধা। তাই কিলিয়ে কাঠাল পাকিয়ে লাভ কি! আপনার অনুবাদ অনুযায়ী নাভির উপরের দলিল দিয়ে নাভির নিচে হাত বাধা প্রমাণ করা কোথাকার ইনসাফ! আপনার দলিলের অনুবাদ সঠিক ধরে নিলেও  আলী রাযি আমল হানাফীদের বিরুদ্ধে গিয়েছে অতএব খুশী হওয়ার কি আছে। আলবানী রহ তাহক্বীক্ব নিয়ে লাভবান হতে পারলেন না! দলিল তো আপনার ঘরে নিয়ে যেতে পারেননি। হায় আফসোস! 

উস্তাদ فَوْقَ السُّرَّةِ অনুবাদ করেছেন "নাভির (একটু) উপরে।" উস্তাদ 'একটু' শব্দটি নিজের পক্ষ থেকে ঢুকিয়ে বন্ধনীর জোর দেখিয়ে হানাফী মাযারের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখানেও কিলিয়ে কাঠাল পাকানোর চেষ্টা। তার পরেও হানাফীদের ঘরে দলিল নিয়ে যেতে পারেননি। হায় আফসোস! 

আসুন দেখি আলী রাযিআল্লাহু আনহু আমল কি ছিলো। ইমাম ইবনুল মুনযির রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৩১৯ হি.) বলেছেন,

وَرُوِيَ عَنْ عَلِيٍّ أَنَّهُ وَضَعَهُمَا عَلَى صَدْرِهِ-

‘আলী রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বুকের উপর হাত বাঁধতেন’। [. ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত ৩/৯৩।]

সনদ একদম সহীহ্ 

আলী রাযিআল্লাহু আনহু বুকের উপর হাত বাঁধতেন’। আলহামদুলিল্লাহ পারলে এই দলীল যঈফ প্রমাণ করুন। 

মুকাল্লিদ সাহেব যে দলীল পেস করেছেন এবং আলবানী রহ যেই হাদিসের সনদ সহীহ্ বলেছেন  তাতে পরিষ্কার শব্দ আছে আলী রাযি فَوْقَ السُّرَّةِ হাত বাধতেন। এর অর্থ কখনোই নাভীর নিচে নয়। বিস্তারিত আলোচনা নিম্মে করা হলো। 

৩|| এন্টিভেনাম  فَوْقَ السُّرَّةِ শব্দের পর্যালোচনা :

এ বাক্যে {فَوْقَ السُّرَّةِ} অর্থাৎ নাভীর উপর দ্বারা বুকের উপর হাত বাঁধা বুঝানো হয়েছে।

আমাদের জবাব হানাফী আলেমও বুকের উপর হাত বাঁধার জন্য {فَوْقَ السُّرَّةِ} শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। যেমন আবুল হাসান আলী ইবনুল হাসান বিন মুহাম্মাদ সুগদী হানাফী (মৃ. ৪৬১ হি.) লিখেছেন,

يَنْبَغِي للرِّجَال ان يضعوا الْيَمين على الشمَال تَحت السُّرَّة وَالنِّسَاء يَضعن فَوق السُّرَّة-

‘পুরুষদের জন্য উপযোগী হল, তারা ডান হাত নাভীর নিচে রাখবে এবং মহিলারা নাভীর উপর রাখবে’। [. আন-নাতফু ফিল-ফাতাওয়া পৃ. ৭১।]

এ বাক্যে হানাফীদের শায়খুল ইসলাম নারীদেরকে নাভীর উপর হাত বাঁধতে বলেছেন। আর হানাফীরা নারীদেরকে বুকে হাত বাঁধতে বলেন। যার অর্থ এটাই হয় যে, এ বাক্যে {فَوْقَ السُّرَّةِ} অর্থাৎ নাভীর উপর দ্বারা বুকের উপর হাত বাঁধা বুঝানো হয়েছে। ঠিক অনুরূপভাবে আলী রাযিআল্লাহু আনহু-এর উপরোক্ত আসারটিতেও {فَوْقَ السُّرَّةِ} অর্থাৎ নাভীর উপর হাত বাঁধার দ্বারা বুকের উপর হাত বাঁধা বুঝানো হয়েছে। এখানে মুকাল্লিদ সাহেবের দলিল এখন আমাদের স্বপক্ষে আলহামদুলিল্লাহ। 

আরও বেশী মানসিক প্রশান্তির জন্য হানাফীদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত উচ্চ সম্মানের অধিকারী মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেবও এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে, {فَوْقَ السُّرَّةِ} অর্থাৎ নাভীর উপর দ্বারা হাত বাঁধার মাধ্যমে বুকের উপর হাত বাধাঁ উদ্দেশ্য করা হয়েছে।

 যেমন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী লিখেছেন, ‘উত্তম ও অনুত্তম নিয়ে এ মতানৈক্য শুরু হয়েছে। কিছু সাহাবী নাভীর উপর হাত বাঁধতেন। অর্থাৎ বুকের উপর। যেমনটা অন্যান্য হাদীসে বুক শব্দটি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর কিছু সাহাবী নাভীর নিচে হাত বাঁধতেন। সুতরাং সবাই স্ব স্ব মাশায়েখের গৃহীত তরীকা গ্রহণ করবে’। [. তাকরীরে তিরমিযী পৃ. ৭০।]

সারকথা :  এ বর্ণনায় আলী রাযিআল্লাহু আনহু হতে {فَوْقَ السُّرَّةِ} অর্থাৎ বুকের উপর হাত বাঁধার বিষয়টি বর্ণিত। মুকাল্লিদ সাহেব যে দলিল প্রস করেছেন আলী রাযিআল্লাহু আনহু থেকে তা হানাফীদের বিরুদ্ধে। এবং আহলে হাদীসদের আমলের পক্ষে।

ইমাম আহমদ রহ আমল :

৪|| মুকাল্লিদ সাহেব এখানে মটেও ইমাম আহমদ রহ আমল নিয়ে আলোচনা করা হয়নি অথবা রদ করাও হয়নি। 

মূলত আপনার অভিযোগ ছিলো। ইমাম আহমদ বুকের উপরে হাত বাধাকে মাকরুহ বলেছেন সেটা খন্ডন করা। আর সেটাই খন্ডন করেছি। তাই প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ভিন্ন দলিল পেস করা কোথাকার ইনসাফ! 

অতএব আমি যেমন আপনার লেখা কে খন্ডন করেছি দলিল ভিত্তিক। আপনি সেটা খন্ডন না করে। ইমাম আহমদ (রহ) আমল কি ছিলো সেটার দলিল নিয়ে উপস্থিতি হলেন। কিন্তু আমার লেখার বিন্দু পরিমাণে খন্ডন করেন নি এটা কেমন খন্ডন।  

আর হ্যাঁ আপনার দলিল অনুযায়ী ইমাম আহমদ রহ "নাভির উপরে" হাত বাধতো প্রমাণ হয়। তাতে হানাফীদের এতো খুশী হওয়ার কিছুই নায়। কারণ হানাফীদের দাবী "নাভির নিচে" হাত বাধা। তাই কিলিয়ে কাঠাল পাকিয়ে লাভ কি! ইমাম আহমদ রহ মত হানাফী দের বিরুদ্ধে গিয়েছে অতএব খুশী হওয়ার কি আছে আলবানী রহ তাহক্বীক্ব নিয়ে! দলিল তো আপনার ঘরে যায়না।  গিয়েছে হাম্বলীদের ঘরে। তারপরও  فَوْقَ السُّرَّةِ শব্দ দ্বারা নাভির উপরে নয় বরং বুকের উপরে হাত বাধা উদেশ্য আমরা প্রমাণ করেছি। 

বরং সম্ভাবনা রয়েছে যে, ইমাম আহমাদও পরবর্তীতে এ থেকে প্রত্যাবর্তন করে নিয়েছিলেন এবং বুকের উপর হাত বাঁধার প্রবক্তা হয়ে গিয়েছিলেন।

যেমনটা শায়েখ মুহাম্মাদ হায়াত হানাফী সিন্ধী ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ হতেও বুকের উপর হাত বাধার মতামত উদ্ধৃত করেছেন। [. ফাতহুল গফূর পৃ. ১৪; নুসখায়ে মাকতাবা মিশকাত আল-ইসলামিয়া।]

অনুরূপভাবে আল্লামা রুশদুল্লাহ রাশেদী রহিমাহুল্লাহর কথানুসারে শায়েখ আব্দুল হক দেহলবী রহিমাহুল্লাহ্ও ‘শারহু সিফরিস সাআদাহ’ গ্রন্থে ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ হতে বুকের উপর হাত বাধার উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। [. দারজুদ দুরার ফী ওয়াযিল আইদী আলাস সদর পৃ. ১৪।]

এই দুইটার জবাব কি ?

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.