বখতিয়ারকে নতুন পাঠ্য বইয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এজন্য তোমাদের নতুনদের প্রকৃত ইতিহাস জানা উচিত। বখতিয়ারকে নিয়ে সকল প্রকার মিথ এবং সত্য ঘটনাগুলো খুবই ছোট করে উপস্থাপন করছি। আশা করি, তোমরা আসল সত্য জানতে পারবে।
বখতিয়ার খিলজি এক ঐতিহাসিক চরিত্র। আফগানস্তানের গারমশির অঞ্চলে যার জন্ম।
ছোটবেলা থেকেই উচ্চবিলাসী বখতিয়ার প্রথমে গজনীতে সুলতান মোহাম্মদ ঘুরি ও পরবর্তীতে দিল্লিতে কুতুবউদ্দিন আইবেকের সেনাবাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন কিন্তু সেখানে কোন স্থান পান নাই। পরবর্তীতে তিনি বাদায়ুনে মালিক হিজবারুদ্দিনের দরবারে সৈন্যের চাকরী পান। পরবর্তীতে অযোদ্ধায় চলে যান সেখানে হুসামউদ্দিন তাকে অযোদ্ধার সীমান্তবর্তী অঞ্চল দেখাশোনার দায়িত্ব দেন । এখান থেকেই তিনি সেনাবাহিনী গঠনের সুযোগ পান। পরবর্তীতে তিনি বিহার বিজয় করেন ১২০৩ সাল নাগাদ অনেকটা বিনা প্রতিরোধে । ১২০৪ সালে ঝাড়খণ্ডের দুর্গম অরন্য দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেন এবং নদীয়া জয় করেন।
পরবর্তীতে তিনি গৌড় অঞ্চল জয় করে তার নাম লক্ষ্মণাবতীকে পরিবর্তন করে "লাখনৌতি" দেন।
নদীয়া জয়ের প্রক্ষাপট:
বখতিয়ারের নদীয়া জয় এটা ছিলো স্থানীয়দের জন্য একটা সুখকর ঘটনা। বখতিয়ারের আগমনের পূর্বে স্থানীয়রা জাত আর বর্ন প্রথা দ্বারা তীব্রভাবে অত্যাচারিত ছিলো। এজন্য বখতিয়ারের আগমনকে স্থানীয়রা ঈশ্বরের আগমন বলে উল্লেখ করে এবং তাকে কোন প্রতিরোধ না করে আরও সাহায্য করে স্থানীয়রা।
ঐতিহাসিক দীনেশ চন্দ্র সেন, ঐতিহাসিক নীহার চন্দ্র রায় এবং রামাই পন্ডিত সহ আরও অনেকের ঐতিহাসিক গ্রন্থ্যগুলো থেকে জানা যায় তৎকালীন সময়কার স্থানীয়রা বর্ণবাদ এবং জাতিবাদ দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে এগুলো থেকে মুক্তি চাচ্ছিল।
তিব্বতি ঐতিহাসিকদের বর্ননাতেও আমরা একই অবস্থা দেখতে পাই।
মুসলিমরা যেমন ছিলো শাসক হিসাবে :
তারা এই ভূমিকে নিজের ভূমি মনে করে নেয় এবং এখানকার মাটি,ভাষা এবং মানুষের সাথে মিশে যায়। তারা এখানকার সম্পদ লুট করে কোথাও চলে যায় না বরং এখানকার স্থানী বাসিন্দা হয়ে যায় এবং জাতি- বর্ণ, গোত্রের বিভাজন নীতি বিলুপ্ত করে সাম্যনীতি প্রতিষ্ঠা করে।
বখতিয়ার কি নালন্দাতে আক্রমণ করেছিলেন?
রাধাকৃষ্ণ চৌধুরী ১৯৬০-৭২ সাল পর্যন্ত পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ওপর ভিত্তি করে ‘Decline of the University of Vikramasila’ প্রবন্ধ লিখে পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন যে বখতিয়ার খলজির বাংলা অভিযানের সঙ্গে নালন্দা ধ্বংসের কোনো সম্পর্কই ছিল না। এছাড়াও রমেশচন্দ্র মজুমদার সহ আরও অনেকেই এটা স্পষ্ট করেছেন বখতিয়ারের সাথে এই অভিযোগের সম্পর্ক নাই।
ভারতের প্রত্নতাত্তিকদের মতে নালন্দা ১১ শতকে ধ্বংস হয়েছে, যখন বাংলাতে বখতিয়ারের আগমনই হয়নি।
নালন্দা কাদের দ্বারা আক্রান্ত হলো:-
ক. সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা হেমন্ত সেনের ছেলে বিজয় সেন দ্বারা।
খ. রাজা স্কন্দগুপ্তের সময়ে (৪৫০ - ৪৬৭)।
দীনেশচন্দ্র সেন তার বৃহৎ বঙ্গের ভিতরে উল্লেখ করেছেন, শশাঙ্ক তার রাজ্যের ভিতরে কোথাও কোন বৌদ্ধ জীবীত থাকলে তার সৈন্যদের শাস্তি দেওয়া হবে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ঐতিহাসিকভাবে প্রামনিত বৌদ্ধদের ব্রাহ্মণদের সম্পর্ক কেমন ছিলো।
তিব্বতি ভাষ্য থেকেও জানা যায় এটা।
নালন্দা মুসলিমদের(বখতিয়ারের) হাতে ধ্বংস হয়েছে এই মিথ কিভাবে এলো:
১. জাতিগত বিভাজন সৃষ্টির জন্য
২. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে
ইতিহাস বিকৃতির কারণ :
ঔপনিবেশিক প্রকল্পের একটা অংশ হিসাবে মুসলিমদেরকে জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং স্বতন্ত্রতা কে অস্তিত্বহীন হিসাবে উপস্থাপন করার একটা প্রচেষ্টা এটা। বিকৃত ইতিহাসের উপর সওয়ার করে রাজনীতি উদ্দেশ্য হাসিল করা ।
বখতিয়ারকে প্রথম দায়ী করা শুরু হয় বৃটিশ শাসন আমলের সময় থেকে এর আগের ঐতিহাসিকদের বর্ননাতে এগুলো কিছু পাওয়া যায় না তেমন। ঔপনিবেশিক প্রকল্পের বিভাজন নীতির পরবর্তী থেকে এমন বিকৃত ইতিহাস সামনে আসতে থাকলো। যাতে করে মুসলিমদের সাথে অন্য জাতির স্থায়ী দ্বন্দ্ব এবং মুসলিমদের আগ্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা যায়।