কা'ফির নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর

কা'ফির কাদেরকে বলা হয়? ই*হুদি-খ্রি*ষ্টানরা আহলে কিতাব, তারাও কি কা'ফির?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
বর্তমান সময়ে এই বিষয়টা খুব ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার। প্রথমে জেনে নিই, ‘কা'ফির’ কে এবং কী করলে কা'ফির হয়।
.
আরবি (ك - ف - ر) তিনটি হরফের সমন্বয়ে اَلْكُفْرُ (কু'ফর) মাসদার (root) থেকে কা'ফির শব্দটি এসেছে। কু'ফর শব্দের অর্থ হলো, অবিশ্বাস করা, অস্বীকার করা ইত্যাদি। পরিভাষায়, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে এবং ইসলাম ও ঈমানের রুকন (মৌলিক বিষয়)-গুলোকে অস্বীকার করাকে কুফ'র বলা হয়। আর যে ব্যক্তি এই কু'ফরের কাজটি করে, তাকে কা'ফির বলা হয়।
.
এবার উদাহরণে আসি। আমরা বলেছি, কেউ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে অস্বীকার করলে সে কা'ফির বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর যারা কু'ফরি করে, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দেবেন। তা এজন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তারা তা অপছন্দ করে। অতএব, তিনি তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দেবেন।’’ [সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৮-৯]
.
❖ কু'ফরের প্রকারভেদ:
কুফ'র প্রধানত দুই প্রকার।
.
(১) কুফ'রে আকবার বা বড় কুফ'র:
এই ধরনের কুফ'রের মাধ্যমে ব্যক্তি কা'ফির সাব্যস্ত হয়; ঈমান থাকা অবস্থায় কেউ এমন কু'ফর করলে সে বেঈ'মান হয়ে যায়। যেমন: কেউ হিজাব নিয়ে কটাক্ষ ও উপহাস করে বললো, ‘‘এটা পরলে ভূতের মতো লাগে!’’ ইসলামের মৌলিক বিধান হিজাব নিয়ে উপহাস করায় ব্যক্তির কু'ফর হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘(হে নবি) আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর বিধি-বিধান এবং তাঁর রাসুলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? তোমরা অজুহাত দেখাবে না; (কারণ) ঈমান আনার পর তোমরা কু'ফরি করেছো।’’ [সুরা তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬]
.
(২) কুফ'রে আসগার বা ছোট কুফ'র:
এই ধরনের কু'ফরের কারণে ব্যক্তি গুনাহগার হলেও কা'ফির হয় না। যেমন: কাউকে হ* ত্যা করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলিমকে গালি দেওয়া পাপ এবং তাকে হ* ত্যা করা কু'ফর।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬০৪৪]
.
কাউকে হ* ত্যা করা নিঃসন্দেহে মস্ত বড় কবিরা গুনাহ। তবে, এর দ্বারা কেউ কা'ফির হয়ে যাবে না। এ ব্যাপারে আলিমগণ একমত। ইসলামের স্বর্ণযুগেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে; তার শাস্তিও হয়েছে, কিন্তু হ* ত্যাকারীকে কা'ফির আখ্যা দেওয়া হয়নি।
.
❖ ইহুদি-খ্রিষ্টানরা কি কা'ফির?
.
প্রথমে ‘আহলে কিতাব’ সম্পর্কে একটু বলে নিই। আহলে কিতাব শব্দ দুটোর সম্মিলিত অর্থ হলো, কিতাবের অধিকারী। অর্থাৎ, যে সম্প্রদায় আসমানি বা ঐশী কিতাবপ্রাপ্ত, তাদেরকে আহলে কিতাব বলা হয়। ইহু* দিদের ধর্মগ্রন্থ হলো তাওরাত আর খ্রি* ষ্টানদের ইঞ্জিল (বাইবেল)। তাওরাত অবতীর্ণ হয়েছিলো মুসা (আ.)-এর উপর আর ইঞ্জিল ঈসা (আ.)-এর উপর। এই দুটো কিতাবের মৌলিকত্ব হেফাজতের দায়িত্ব ছিলো তাদের নিজেদের উপর। যুগে যুগে তাদের পাদ্রী-রাব্বাইরা এগুলোতে ম্যাসিভ পরিবর্তন এনেছে। যার ফলে, এ দুটোর মৌলিকত্ব আর নেই। 

আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম; এতে ছিলো হিদায়াত ও নুর (আলো)। অনুগত নবিগণ তাদেরকে সেই অনুসারে ফয়সালা দিতেন এবং রব্বানি (আল্লাহওয়ালা) ও বিদ্বানগণও (এর আলোকে ফয়সালা দিতো), কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিলো। আর তারা ছিল এর উপর সাক্ষী। [সুরা মায়িদাহ, আয়াত: ৪৪]

পক্ষান্তরে, কুরআনের হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর আমিই এর সংরক্ষক।’’ [সুরা হিজর, আয়াত: ৯] পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলোতে (তাওরাত, বাইবেল) শেষ নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। 

কিন্তু তারা অহংকারবশত নবিজিকে মেনে নেয়নি। নবিজিকে মেনে না নেওয়া বড় কুফ'র। কারণ নবিজিকে না মানা মানে কুরআনকে অস্বীকার করা, পুরো ইসলামকেই অস্বীকার করা। এই কাজগুলো নিঃসন্দেহে কুফ'রি। 

এজন্যই তারা যতদিন নবিজিকে গ্রহণ না করবে এবং ইসলামকে মেনে না নেবে, ততদিন ঈমানদার হতে পারবে না। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো অস্বীকার করার কারণে তাদেরকে কা'ফির হিসেবেই বিবেচনা করা হবে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, ই* হুদি হোক আর খ্রি* ষ্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার ব্যাপারে শুনেছে কিন্তু আমি যা নিয়ে এসেছি (আমার রিসালাত), তার উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, অবশ্যই সে জাহান্নামি হবে। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৭৯]
.
ই* হুদি-খ্রি* ষ্টানরা যে কা'ফির, এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম থেকে শুরু করে প্রত্যেক যুগের আলিমগণ একমত পোষণ করে এসেছেন। ইদানীং তথাকথিত কিছু উদারমনা মানুষ তাদেরকে কা'ফির বলতে সংকোচবোধ করেন। আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতে থাকা এ সকল লোকের কথার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.