ইহুদি-খ্রিষ্টানরাও কি মুসলিম ছিলো?

হ্যা, ইহুদি-খ্রিষ্টানরাও যে মুসলিম ছিলো। এমনকি সকল নবির ধর্মই ছিলো ইসলাম! বিস্তারিত জানুন দলিলসহ।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘নবিগণ একে অপরের বৈমাত্রেয় ভাই। তাঁদের মা (শরিয়ত) ভিন্ন, কিন্তু দ্বীন বা ধর্ম (বাবা) এক।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৩৪৪৩]
.
অর্থাৎ, নবিগণের দ্বীন (ধর্ম) একটিই, তা হলো ইসলাম। তবে, তাঁদের শরিয়ত বা জীবনব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। ধরুন, কোনো ব্যক্তি ৪ জন নারীকে বিয়ে করলো। এই চার নারীর সকল সন্তানের বাবা কিন্তু একজনই। কিন্তু মা ভিন্ন ভিন্ন। এখানে বাবা হলেন দ্বীন বা ধর্ম (ইসলাম), যেটি সব নবির একই, আর মা হলেন শরিয়ত বা জীবনবিধান, যেটি একেক নবির একেক রকম ছিলো। নবিজির উপর অবতীর্ণ কুরআন একটি শরিয়ত (জীবনব্যবস্থা), মুসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ তাওরাত একটি শরিয়ত, ঈসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ ইঞ্জিল (বাইবেল) একটি শরিয়ত। কোনো শরিয়ত বিকৃত ও রহিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এর উপর আমল করা আবশ্যক। পূর্ববর্তীদের এসব শরিয়ত বিকৃত হওয়ার ফলে এখন আর তারা মুসলিম বলে গণ্য হবে না। [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহর ফাতাওয়া মিসরিয়্যাহ (পৃষ্ঠা: ৫০৯-৫১০) অবলম্বনে]
.
প্রশ্ন আসতে পারে, সকল শরিয়ত (জীবনবিধান) যদি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, তাহলে এগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয় কী করে?
.
উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজে বুঝে আসবে। ইহুদিদের জন্য সপ্তাহের শনিবার দিনটি ছিলো ইবাদতের দিন। এ দিন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিলো। [সুরা বাকারা, আয়াত: ৬৫]
.
এটা ছিলো দাউদ (আ.)-এর সময়ের শরিয়ত। সেই সময়ের উম্মতদের জন্য এই বিধান মেনো চলা বাধ্যতামূলক ছিলো। কিন্তু আমাদের শরিয়তে এটি নেই। বিভিন্ন নবির শরিয়তের বিধানে এরকম বিভিন্ন পার্থক্য ছিলো।
.
যাহোক, ইহুদি-খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত করেছে। নিজেদের মতো করে বিধি-বিধানে পরিবর্তন এনেছে।
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে, অতঃপর সামান্য মূল্য পাওয়ার জন্য বলে, ‘এটা আল্লাহর কাছ থেকে’।’’ [সুরা বাকারা, আয়াত: ৭৯]
.
সাহাবি ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘তোমরা কোনো ব্যাপারে আহলে কিতাবদের জিজ্ঞাসা করো, অথচ তোমাদের কাছে রয়েছে নবির উপর অবতীর্ণ আল্লাহর নতুন (Latest) বাণীসংবলিত কিতাব। তোমরা সেটা পড়ছো, যেটিতে কোনো কিছুর মিশ্রণ নেই। আল্লাহ তোমাদের জানিয়েছেন যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছিলেন, আহলে কিতাবরা সেগুলো পরিবর্তন করেছে এবং তাদের নিজ হাতে কিতাব বিকৃত করে ফেলেছে আর বলেছে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২৬৮৫]
.
যেহেতু বর্তমানে পূর্বের সকল আসমানি কিতাব বিকৃত হয়ে গেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা নতুন শরিয়ত দিয়ে নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন, সেহেতু এখন সবাইকে মুহাম্মাদি শরিয়ত অনুসরণ করতে হবে। এমনকি এই যুগে যদি মুসা (আ.)-ও আসেন, তাঁকেও নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করতে হবে। কারণ নতুন করে মুসা (আ.)-কে আর শরিয়ত দেওয়া হবে না এবং কুরআন আসায় আগের সকল শরিয়তের বিধান রহিত হয়ে গেছে।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমি তোমাদের নিকট নিয়ে এসেছি স্বচ্ছ ও নির্মল বিষয় (শরিয়ত)।...যদি মুসা (আ.)-ও জীবিত থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমাকে অনুসরণ করতে হতো।’’ [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৪৭৩৬; হাদিসটি হাসান]
Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.