আমরা যখন নতুন নতুন দ্বীন প্র্যাকটিস শুরু করি, যখন নফল ইবাদাতে, সুন্নাহ পালনে, দ্বীনের যাবতীয় খুঁটিনাটি কঠোরভাবে মেনে চলতে শুরু করি, আমাদের অন্তরে তখন একধরনের উৎফুল্লতা কাজ করে। তখন আমরা একটি ইবাদত করলেই নিজেকে অনেক আত্মম্ভরির মনে করি।যা অহংকার, [নিজের সম্পর্কে বড়াই বা গর্ব, অহমিকা; আত্মম্ভরিতা]
বিষয় টা এমন হয়েছে যে আমরা যখন দ্বীনের উপর জোড় দেই অনেক সময় অহংকারী হয়ে যাই,
যে আজকে আল্লাহর ইবাদত করলাম,নামাজ পড়লাম,সাদকাহ দিলাম,কোরআন পড়লাম আমার মতো আর কেউ নাই।আহা– আজকের দিনে আমার মতো উত্তম আমলদার আর ক'জন আছে? ক'জন আছে যারা ফযরে জামা'আতে এসেছে, কুরআন তিলাওয়াত করেছে, যাবতীয় সুন্নাহ-নফল আমল করেছে?'
একটু আমল বাড়লেই আমরা নিজেদের অন্য উচ্চতায় ভাবতে শুরু করে দিই। আশপাশের লোকজনকে দেখলে মনে হয়— 'এই লোক হয়তো আজ ফযরটাও পড়ে নাই'। 'এই লোকের আজ কি কুরআন হাতে নেওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার মতো?এই লোক শেষ কবে তাহাজ্জুদ পড়েছে মনে করতে পারবে?এই লোক কি নিয়মিত সাদাকা করে?'
এসব ভেবে নিজেকে বড় কিছু মনে করি যা বলতে গেলে আমরা অহংকার করি,
আর যেহেতু আমরা জানি না আমাদের কোন আমল আল্লাহ কবুল করছেন আর কোন আমল প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে, তাই কোন আমলই, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট— আমাদের অন্তরে তা যেন আত্মতৃপ্তি না এনে দেয়। মনে রাখতে হবে— ইবলিশ ছিলো সবচেয়ে আমলওয়ালা এক নেককার জ্বীন। তার ধ্বংসের কারণ একটাই— আত্মম্ভরিতা।
হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর তাঁকে সেজদা করার নির্দেশ প্রদান করা হয় ফেরেশতাদেরকে। তাদের মধ্যে একজন জিনও ছিল। যে আল্লাহর এ আদেশকে মানতে পারেনি। যে কাজটি তাকে আদেশ পালনে বিরত রেখেছে, তাহলো আত্ম-অহংকার। যা সৃষ্টির মধ্যে প্রথম পাপ। কুরআনুল কারিমের সুরা বাক্বারার ৩৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلاَئِكَةِ اسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ অর্থাৎ এবং যখন আমি আদমকে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলিস ব্যতিত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
অত্র আয়াতে অহংকার বলতে وَاسْتَكْبَرَ শব্দটিকে বুঝিয়েছেন। ইবলিস আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার ভিত্তি কোনো ভুল ধারণা কিংবা দ্বিধা-সংশয় নয়; বরং আত্ম-অহংকারই ছিল এর ভিত্তি। শ্রেষ্ঠত্ববোধ থেকেই ইবলিসের এ অস্বীকৃতি এসেছিল।
হজরত কাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, এই অহংকারের পাপই ছিল সর্বপ্রথম পাপ। যা ইবলিস হতে প্রকাশ পেয়েছিল।
অহংকার প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একলোক বলল, যে কোনো লোক পছন্দ করে তার জামাটা ভালো হোক, তার জুতাটা ভালো হোক? তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর; তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হচ্ছে, সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।’ (মুসলিম)
আর আমরা যখন আল্লাহ আকবর বলি তখন বলি আল্লাহ মহান বা আল্লাহ সবচেয়ে বড়।কিন্তু যখন আমরা অহংকারী করি কোন কিছু নিয়ে, কাউকে জাজ করি,নিজেকে বড় মনে করি, নিজেকে অনেক কিছু দাবি করি।এই যে নিজেকে বড় মনে করা এই বিষয়টাই হচ্ছে অহংকার।বিষয় টা এমন যে আমরা অহংকার করলে আল্লাহর সাথে নিজেদের কে শরীক করি।নাউজুবিল্লাহ কিন্তু এসব এ হইতাছে।
পরিশেষে.......
যেহেতু এ আত্ম-অহংকারের কারণে ইবলিস তার গলদেশে অভিশাপের গলাবন্ধ পরিধান করেছে। মহান আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ে বিতাড়িত হয়েছে। এবং অহংকারের কারণে কোনো মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সে অহংকার যদি মুসলিম উম্মাহর মাঝে দেখা দেয়, তবে শয়তানের অনুসরণ এবং ধ্বংস ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। সুতরাং দুনিয়ার প্রতিটি কাজে আল্লাহর রহমতের আশা করার পাশাপাশি অহংকার থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ তাওফিক কামনা করি। আল্লাহ সবাইকে অহংকারমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।শয়তানের ওয়াসাওয়াসা থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি আল্লাহর কাছ থেকে আমাদের পানা চাইতে হইবো। যাতে দিনের প্রতি অটুল থাকি আমরা।আর এই রমজান মাসে তো শয়তান শিকলবন্দী এটি আমাদের জন্যে একটি সুযোগ যে আমরা নিজের নফস কে কন্ট্রোল করতে পারবো।আল্লাহ হেফাজত করুক সবাইকে, আমীন।