ইসলামে গণক এর বিধান কি?

ইসলামে গণক এর বিধান কি?


কথিত আছে, একদিন সম্রাট আকবরকে এক জ্যোতিষী বলেছিলো, সম্রাট আর মাত্র ৩ বছর বাঁচবে। এতে সম্রাট ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো এবং বিষণ্ন মনে পায়চারি করতে লাগলো।

এটি দেখে আকবরের অন্যতম প্রাজ্ঞ সভাসদ বীরবল জ্যোতিষীকে বললো, ‘আপনার নিজের আয়ু কতো, হিসেব করুন তো!’ অনেকক্ষণ হিসাব-নিকাশ করে জ্যোতিষী বললো, ‘আরো ২৫ বছর।’ বীরবল তখনি তর*'বারি দিয়ে এক কো*পে জ্যোতিষীর মাথা ফেলে দিলো! এরপর আকবরকে বললো, ‘দেখলেন তো জাঁহাপনা, জ্যোতিষীর গণনা কতটা ভুল?’ [ঘটনাটির বিশ্বস্ততা যাচাই করার সুযোগ হয়নি]

ভালো করে জেনে রাখুন—রাশিফল ব্যাখ্যাদাতা, গণক এবং জ্যোতিষীর কথা (হোক সেটি মানুষ, টিয়াপাখি বা অন্য কিছু) বিশ্বাস করা দ্বারা একজন ব্যক্তি সরাসরি ঈমানহারা হয়ে যায়।

নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো গণক বা জ্যোতিষীর কাছে যায় এবং তার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা অবতীর্ণ (কুরআন) তা অবিশ্বাস করে।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৩৯০৪; হাদিসটি সহিহ]
.
কীভাবে সে কুরআনকে অস্বীকার করে?
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘বলুন, আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও জমিনে কেউ অদৃশ্যের খবর জানে না।’’ [সুরা আন নামল, আয়াত: ৬৫]
.
সুতরাং, কেউ যদি জ্যোতিষীর কাছে যায় এবং জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য ও সঠিক বলে বিশ্বাস করে, তবে আল্লাহর বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্যকে অন্যের সাথে মেলানোর মাধ্যমে শির্ক করার কারণে এবং কুরআনের কথাকে অবিশ্বাস করার কারণে সে মুশ*'রিক ও কা*'ফির হয়ে যাবে।
.
তবে, কেউ যদি শুধু অভিজ্ঞতার জন্য যায় এবং জ্যোতিষীর কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস না করে, তাহলে সে ঈমানহারা হবে না, কিন্তু ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করবে, তার ৪০ রাতের নামাজ কবুল হবে না।” [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৫৭১৪]
.
এর কারণ হলো, সে জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে নিজের ঈমানকে অবমূল্যায়ন করেছে, আল্লাহর কথার সাথে খামখেয়ালিপনা করেছে। সে এমন একটি জঘন্য শির্কের ব্যাপারে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তো দূরের কথা, ঘৃণাও দেখাতে পারেনি।
.
তবে, কেউ জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে থাকলে, অবশ্যই তাকে নামাজ পড়ে যেতে হবে। কারণ নামাজ কবুল হওয়া এক বিষয় আর নামাজের আবশ্যকতা সম্পন্ন করা আরেক বিষয়। নামাজ বাদ দিলে ফরজ ত্যাগের গুনাহ হবে, যেটি আরো ভয়ানক। সুতরাং সে নামাজ পড়বে এবং তাওবাহ্ করবে। তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল না হলেও নামাজত্যাগের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহর মেহেরবানি হলে তার ভুল মাফ করে দিতে পারেন এবং নামাজও কবুল করতে পারেন।
.
যারা জ্যোতিষী, গণক ও রাশিফল বর্ণনাকারীদের কথা বিশ্বাস করে, তারা বড় ধরনের বোকা। যে জ্যোতিষী নিজেই ফুটপাতে থেকে কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে, সে যদি নিজের ভবিষ্যতের ব্যাপারেও জানতো, তবে তো তার এই অবস্থা থাকার কথা না। এদের নিজেদের জীবনেই হতাশার শেষ নেই। এরা মিথ্যুক, ভণ্ড ও প্রতারক।
.
খোদ নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত গায়েব (অদৃশ্যের খবর) এবং ভবিষ্যতের বিষয়াবলী জানতেন না। তবে, যেটুকু তাঁকে জানানো হতো, সেটি ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘(হে নবি) আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান (তা ব্যতীত)। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে কল্যাণের প্রাচুর্য পেয়ে যেতাম এবং কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না।’’ [সুরা আল আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮]
.
প্রশ্ন আসতে পারে: কোনো কোনো সময় তো ওদের কথার বাস্তবতাও দেখা যায়, তাহলে?
.
এ ব্যাপারে স্বয়ং নবিজিকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘ফেরেশতাগণ মেঘের মাঝে এমন সব বিষয় নিয়ে কথা-বার্তা বলেন, যা পৃথিবীতে ভবিষ্যতে ঘটবে। তখন জিন-শয়তানেরা কিছু কথা শুনে ফেলে এবং তা জ্যোতিষীদের কানে এমনভাবে ঢেলে দেয়, যেমন বোতলে পানি ঢালা হয়। তখন তারা (জ্যোতিষীরা) এগুলোর সাথে আরও শত মিথ্যা বাড়িয়ে বলে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৩২৮৮ ও ৭৫৬১]

প্রতিটি বস্তুরই হাকীকত রয়েছে। কোন বান্দাই প্রকৃত ঈমানের পর্যায়ে পৌছতে পারবে না, যতক্ষণ না এটা দৃঢ়ভাবে জানবে যে, তার সাথে যা ঘটেছে তা কখনো তাকে ছেড়ে যেতো না। আর যা তাকে ছেড়ে গেছে তা কখনো তার জন্য ঘটতো না।

[মুসনাদে আহমাদ: ৬/৪৪১-৪৪২]

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.