শিল্প বিপ্লব ও এর প্রভাবে পারিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যুবকদের পরিবারহীন অবস্থায় রক্ষণশীল গ্রামের পরিবেশ থেকে নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার শহরে স্থানান্তর করা হয়। অতঃপর শহরে পরিবার নিয়ে থাকার উপযুক্ত বেতন না দিয়ে যৌনতার প্রয়োজন পূরণে বাঁধা দেয়া হয় এবং বেশ্যাবৃত্তির সুযোগ করে দেয়া ও তা সহজ করে তুলা হয়।
অন্যদিকে মেয়েদেরকে ব্যাপকভাবে কর্মক্ষেত্রে হাযির করা হয় এবং জীবিকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করা হয়। নারীদেরকে পুরুষের সাথে সমান অধিকারের দাবীতে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়। তারা পাপ কাজেও সাম্যের দাবী করতে থাকে সমতার সামগ্রিকতার অংশ হিসেবে।
এসবই ছিল বিপর্যয় ও অবক্ষয়ের পথে আরো কঠিন ধাক্কা।
এই পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক ইহুদীবাদ সুযোগ হিসেবে লুফে নেয়। চাই তা বাস্তব ক্ষেত্রে হোক বা তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে। ফলে মার্ক্স, ফ্রয়েড ও এমিল দুর্কেম সহ অন্যান্য দার্শনিকরা নৈতিক-চরিত্রকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে মানুষের দৃষ্টিতে তুচ্ছ বানাতে শুরু করল। নারীদেরকে (সব মাধ্যম ও সকল পথের সাহায্যে) যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার দিকে প্ররোচিত করতে শুরু করল। যাতে তারা বের হয়ে এসে যৌনতায় লিপ্ত হয়ে যায় এবং পুরুষের জন্য সহজলভ্য হয়ে যায়।
অতঃপর সিনেমা আবিষ্কৃত হয়। মূলত এটিও একটি ইহুদীবাদী শিল্প। তারই উত্তরসূরি হচ্ছে প্রচার মিডিয়া, টেলিভিশন। যেগুলো সমস্ত নৈতিক অবক্ষয় ও যৌন লালসাকে আরো বৃদ্ধি করে তুলছে। নাটক, সিনেমা, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টিকটক, বাণিজ্যিক প্রচারণা সহ সর্বত্র নারীদের প্রদর্শনী আর যৌনতার সুরসুরিতে গোটা সমাজকে উত্তেজিত করে তোলা হয়।
সাজঘর, রূপচর্চার কেন্দ্র এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সামাজিক অনুষ্ঠান। আর এসব ক্ষেত্রে চলা যৌনতা ও ব্যভিচারের বীভৎস লীলাখেলা। সব মিলিয়ে একটি সংস্কৃতি আর লাইফস্টাইলই তৈরি করা হয় যৌনতা কেন্দ্রিক উপাদান আর চিন্তাভাবনার উপর।
এসবই ক্রমান্বয়ে ঘটেছে, একবারে ঘটেনি।
নীতি-নৈতিকতার ধারকরা সর্বদাই অবক্ষয়ের ব্যাপারে সতর্ক করতো। অন্যদিকে বিবর্তন ও আধুনিকতার ধারকরা মন্দকে উত্তম হিসেবে পেশ করতো। এই দুই পক্ষের মাঝেই বহু রক্তক্ষয়ী দীর্ঘ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে।
তবে আধুনিক মিডিয়া মাধ্যমসমূহে বারবার চরিত্র-বিধ্বংসী বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছিল। সেই সাথে ছিল পুঁজিবাদী -ইহুদীবাদী- অর্থ ও শিক্ষাব্যবস্থা, যা যৌবন কালে সুস্থ-সঠিক বিয়েকে কঠিন করে রাখে, অন্যদিকে জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য সর্বপ্রকারের যৌনতাকে সহজ করে রাখে, যে আবেদন যুবকরা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয় না। এ ছাড়া ছিল যৌন-স্বাদ আস্বাদনের জন্য নারীর সহজলভ্যতা। যে মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে, পথে-ঘাটে ও শিক্ষাক্ষেত্রে পুরুষদের পাশেই অবস্থান করছে।
সে সাথে পত্রিকা, সিনেমা ও টেলিভিশন মেয়েদের লাস্য-নৃত্য, মান-অভিমান ও অনুরাগ-বিরাগ ইত্যাদি সবকিছু ফুটিয়ে তুলে যুবকদের যৌনতার দিকে আকর্ষণ করা হচ্ছিল। সরকারী ও বেসরকারীভাবে দেহ ব্যবসায়ের বড় বড় আড্ডা গড়ে উঠছিল। সুন্দরী প্রতিযোগীতার নামে বেশ্যাবৃত্তি আর দেহব্যবসার আরেক আসরের আগমন ঘটেছিল যৌন উন্মাদনার এই ময়দানে। চিত্ত বিনোদনের ও নারী-পুরুষের মিলন কেন্দ্রসমূহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট আর ট্যুরিস্ট স্পট। যেখানে ভদ্রবেশি দালালরা কু-কর্মের জন্য খদ্দের সংগ্রহ করে।
এসব পাপাচার ব্যাপকভাবে প্রসারিত হওয়ার পর লোকদের মনে এই চিন্তা জাগিয়ে দেওয়া হলো যে, কেবলমাত্র ভোগ-সম্ভোগ ও স্বাদ আস্বাদনই জীবন। মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত এই কাজে পূর্ণ মাত্রায় পরিতৃপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই ভোগ-সম্ভোগে আত্মনিমগ্ন হয়ে থাকাই বাঞ্ছনীয়। উপরন্তু মানুষের এই জীবনে একটাই সুযোগ। কাজেই কারোর পক্ষে তাকে যত বেশি ভোগপূর্ণ করা সম্ভব, তা তার অবশ্যই করা উচিত। এক্ষেত্রে কোনো বাঁধা নিষেধের কাছে পরাজয় বরণ করা উচিত হতে পারে না।
এ সবই পথভ্রষ্ট জাহিলিয়াতের কাজ। এভাবে গোটা সমাজ নানাভাবে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে পড়ল। সমাজের কঠিনতম বন্ধনসমূহও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
নারী স্বাধীন হয়ে গেলো। লোকেরাও ধর্ম-নৈতিকতা, চরিত্র ও ঐতিহ্যের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে গেল। বন্ধনমুক্ত যৌন লালসা পূরণই সে সমাজের ধর্মে পরিণত হলো। রাষ্ট্র এজন্য সর্বস্থানে সব সুযোগ-সুবিধা দিতে লাগল। তাদের অধীনে সব ব্যক্তি ও মাধ্যমকে এর দিকে আহ্বানের জন্য প্রস্তুত করে তুলা হলো। লেখক-সাহিত্যিক, গবেষক-রিসার্চার, গল্প-ইতিহাস, পত্র-পত্রিকা, রেডিও, মুভি-সিনেমা ইত্যাদি সব।
সুত্র: জাহিলিয়াতের ইতিবৃত্ত