দু‘আ ও সাহায্য চাওয়ার মধ্যে শির্ক

দু‘আ ও সাহায্য চাওয়ার মধ্যে শির্ক


প্রথমে একটি সংক্ষিপ্ত ঘটনা পড়ুন, এরপর আকিদার গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় (দু‘আ ও সাহায্য চাওয়ার মধ্যে শির্ক) সম্পর্কে জানুন।

.
একজন নেককার ব্যক্তি একবার সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক ডাকাত তাকে আটকালো এবং হত্যা করতে উদ্যত হলো। এই ডাকাতের কাজই ছিলো, কোনো পথিককে আটক করে তার থেকে সবকিছু লুটপাট করে, শেষে সেই ব্যক্তিকে মেরে ফেলা। এমতাবস্থায় এই অসহায় ব্যক্তি দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য ডাকাতের কাছে কিছুটা সময় চান। ডাকাত তাকে তাচ্ছিল্যের সাথে অনুমতি দিলো।
.
সেই ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এই আয়াতটি পড়লেন—
.
اَمَّنۡ یُّجِیۡبُ الۡمُضۡطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَ یَکۡشِفُ السُّوۡٓءَ
.
‘‘কে তিনি, যিনি বিপদাপন্ন লোকের ডাকে সাড়া দেন—যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তার দুঃখ-বিপদ দূর করেন?’’ [সুরা নামল, আয়াত: ৬২]
.
লোকটি এই আয়াত তিনবার পড়লো। তারপর আকাশ থেকে একজন ব্যক্তি বর্শা নিয়ে এসে ডাকাতকে হত্যা করে ফেলে। আসমান থেকে আসা লোকটি তখন এই ব্যক্তিকে সাহস জুগিয়ে বলেন, ‘‘আমি তাঁর ফেরেশতা, যিনি বিপদাপন্ন লোকদের ডাকে সাড়া দেন—যখন তারা তাঁকে ডাকে।’’
.
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইবনু আসাকির (রাহিমাহুল্লাহ) উভয়ে এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। [ড. আয়িয আল কারনি, লা তাহযান, পৃষ্ঠা: ২৭৫-২৭৬]
.
দু‘আ বা কাউকে ডাকা কিংবা কারো সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমেও আমরা শির্ক করি। কখন সেটি বৈধ আর কখন সেটি শির্ক তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
.
[এক.]
যদি কোনো জাগতিক বা দুনিয়াবি বিষয়ের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয় এবং সেটি মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে, তবে মানুষের কাছে সেটির জন্য সাহায্য চাওয়া যাবে। যেমন: আপনি লিফটে আটকে গেলেন; এমতাবস্থায় চিৎকার করে ডাকছেন, ‘আমাকে বের করুন’। এটি বৈধ সাহায্যপ্রার্থনা। আপনি একটা বোঝা ওঠাতে পারছেন না, তাই কাউকে ডেকে সাহায্য চাইতে পারেন। এতে সমস্যা নেই।
.
[দুই.]
আপনি এমন স্থানে বিপদে পড়েছেন, যেখানে কেউ নেই। ধরুন, আপনি সাঁতার জানেন না, তাই, পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। সেখানে কাউকে পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় এভাবে অনির্দিষ্টভাবে মানুষকে ডাকতে পারেন বা সাহায্য চাইতে পারেন, ‘কে আছেন? একটু আগান! আমাকে সাহায্য করুন’। এভাবে ডাকা জায়েয।
.
[তিন.]
কিন্তু, এমতাবস্থায় নির্দিষ্ট কাউকে আপনি ডাকতে পারবেন না। যেমন: আপনি পানিতে হাবুডুবু খাওয়া অবস্থায় নির্দিষ্টভাবে এমন কারো নাম ধরে ডাকতে পারবেন না, যে সেখানে নেই। যেমন: ইয়া আলী! আমাকে উদ্ধার করো! হে গওসে পাক! হে পীর সাহেব! হে অমুক! আমাকে বাঁচাও। এভাবে ডাকার মাধ্যমে আপনি অমুক তমুককে সর্বদা সবখানে হাজির-নাজির মেনে নিলেন, তাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে দিলেন, তাদের অলৌকিকতায় বিশ্বাস করলেন। কারণ, আপনার অদৃশ্য আহ্বান আল্লাহ্ ছাড়া কে শুনতে পারে? অতএব, এভাবে ডাকলে শির্ক হবে। তবে, কোনো মানুষ যদি সেখানে উপস্থিত থাকে, তবে তার কাছে সাহায্য চাইতে কোনো অসুবিধা নেই, সে যেই হোক।
.
[চার.]
এগুলো গেলো জাগতিক বা দুনিয়াবি সমস্যা সমাধানের জন্য সাহায্য প্রার্থনা। আর, যেসব সমস্যার সমাধান কেবল আল্লাহই দিতে পারেন, সেগুলোর জন্য যদি কেউ আল্লাহ্ ব্যতীত কারও কাছে সাহায্য চায়, তবে সে শির্ক করার মাধ্যমে মুশ* রিক হয়ে যাবে এবং ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে।
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।’’ [সুরা জিন, আয়াত: ১৮]
.
এজন্যই সুরা ফাতিহায় আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, ‘‘আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি।’’ [সুরা ফাতিহা, আয়াত: ০৪]
.
যেমন: আপনার মাথা ব্যথা করছে। আপনি যদি কোনো পীর সাহেবকে, বাবা-মাকে বা অন্য কাউকে ডাকেন—মাথা ব্যথা ভালো করে দেওয়ার জন্য, তবে সেটি শির্ক হবে; পীর সাহেব, বাবা-মা বা অমুক তুমুক সেখানে উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক। কারণ, কারও মাথা ব্যথা ভালো করে দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ্। তবে, আপনি কোনো ডাক্তারকে বলতে পারেন, ‘ডক্টর, আমার চিকিৎসা করুন’ বা আপনি কাউকে বলতে পারেন, ‘ভাই, আমার জন্য দু‘আ করুন।’ কিংবা বলতে পারেন, ‘আম্মু! আমার মাথাটা টিপে দাও।’
.
মূলত বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের মতামতের আলোকেই লেখাটি সাজানো হয়েছে। লেখাটি বড় হয়ে যাবে বিধায় তাঁদের মতামতগুলো কোটেশান আকারে লিখা সম্ভব হয়নি।
Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.