সালাতে হাত বাধা হাদীসের তাহকিক : পর্ব -১

বুকে হাত বাঁধা মাকরূহ অভিযোগ খন্ডন : 

 ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ হতেই কিছু মানুষ এটা বর্ণনা করেন যে, তিনি নামাযে বুকে হাত বাঁধাকে মাকরূহ মনে করতেন। কেননা হাদীসে আছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘তাকফীর’ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন ইমাম ইবনু কাইয়েম রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৭৫১ হি.) বলেছেন,

قال في رواية المزني : "أسفل السرة بقليل ويكره أن يجعلهما على الصدر " وذلك لما روى عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه نهي عن التكفير وهو وضع اليد على الصدر-

ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ মুযানীর বর্ণনা মোতাবেক বলেছেন যে, ‘নাভীর কিছুটা নিচে হাত রাখতে হবে। আর ইমাম আহমাদ বুকে হাত বাঁধাকে অপছন্দ করতেন। কেননা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত আছে যে তিনি তাকফীর করতে নিষেধ করেছেন। তাকফীর হল বুকের উপর হাত বাঁধা’। [. ইবনুল কাইয়িম বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ ৩/৬০১; আরো দেখুন : মাসায়েলে আহমাদ আবূ দাঊদ সিজিস্তানীর বর্ণনা পৃ. ৪৮।]

অর্থাৎ ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহর পক্ষ থেকে অপছন্দ করার কারণ হিসেবে এটা বলা হয়েছে যে, ‘হাদীসে তাকফীর করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর তাকফীরের অর্থ হল, ‘বুকের উপর হাত বাধা’।

আমাদের  জবাব: 

প্রথমত : যে হাদীসের ভিত্তিতে এ কথাটি বলা হয়ে থাকে তা প্রমাণিত নয়। সুতরাং মূল হাদীসটি প্রমাণিত না হওয়ার কারণে এর দ্বারা গৃহীত দলীলও অগ্রহণযোগ্য বাতিল ।

দ্বিতীয়ত : যদি এ হাদীসটিকে প্রমাণিতও মেনে নেয়া হয়, তাহলেও এতে এ কথাটির স্পষ্ট বিবরণ নেই যে, এটা নামাযের অবস্থায় এবং আল্লাহর জন্যও নিষিদ্ধ। যেমন কিছু বিষয় নামাযের বাইরে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোর জন্য নিষিদ্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু নামাযের মধ্যে জায়েয। যেমন নামাযের বাইরে কাউকে তাযীমী কিয়াম (সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা) করা জায়েয নেই।  (সুনান তিরমিযী হা/২৭৫৪)  কিন্তু নামাযের অভ্যন্তরে আল্লাহর জন্য তাযীমী কিয়াম করা জায়েয। বরং এটি নামাযের অন্যতম একটি ফরয বিধান। (সুরা বাকারাহ ২/২৩৮)

তৃতীয়ত : তাকফীরের অর্থ শুধু বুকের উপর হাত বাঁধা নয়। বরং বুকের উপর হাত বেঁধে কোন কিছুর জন্য নত হওয়াকে তাকফীর বলা হয়। যেমন ‘আল-মুজামুল ওয়াসীত’ গ্রন্থে আছে, ‘তিনি তার নেতার জন্য তাকফীর করলেন। অর্থাৎ তার সম্মানে স্বীয় হাতকে বুকের উপর রেখে নিজের মাথাকে রুকূর ন্যায় অবনত করলেন’। [. আল-মুজামুল ওয়াসীত ২/৭৯১ ৭৯২।]

পর্যালোচনা :

নামাযে বুকের উপর হাত বাধার সময় নামাযী ব্যক্তি এ অবস্থায় থাকেন না। উপরন্তু নামাযের মধ্যে এই আমলটি (বুকে হাত বাধার আমল) গাইরুল্লাহর জন্যও করা হয় না।

উক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, তাকফীরের নিষিদ্ধতা সংক্রান্ত হাদীসটি প্রথমত প্রমাণিত নেই। উপরন্তু নামাযের সাথেও এর কোনই সম্পর্ক নেই। সুতরাং এর ভিত্তিতে ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহর নামাযে বুকের উপর হাত বাধাকে মাকরূহ আখ্যা দেয়া শ্রম্নত নয় (ইমাম আহমাদ হতে এমনটা শ্রবণ করা হয়নি)।

বরং সম্ভাবনা রয়েছে যে, ইমাম আহমাদও পরবর্তীতে এ থেকে প্রত্যাবর্তন করে নিয়েছিলেন এবং বুকের উপর হাত বাঁধার প্রবক্তা হয়ে গিয়েছিলেন। যেমনটা শায়েখ মুহাম্মাদ হায়াত হানাফী সিন্ধী ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ হতেও বুকের উপর হাত বাধার মতামত উদ্ধৃত করেছেন। [. ফাতহুল গফূর পৃ. ১৪; নুসখায়ে মাকতাবা মিশকাত আল-ইসলামিয়া।]

অনুরূপভাবে আল্লামা রুশদুল্লাহ রাশেদী রহিমাহুল্লাহর কথানুসারে শায়েখ আব্দুল হক দেহলবী রহিমাহুল্লাহ্ও ‘শারহু সিফরিস সাআদাহ’ গ্রন্থে ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ হতে বুকের উপর হাত বাধার উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। [. দারজুদ দুরার ফী ওয়াযিল আইদী আলাস সদর পৃ. ১৪।]

এছাড়াও এর সমর্থন এর দ্বারাও হয় যে, ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে হুলব আত-তাঈ রাযিআল্লাহু আনহুর হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেছেন। যেখানে বুকের উপর হাত বাধার স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। 

عَنْ قَبِيْصَةَ بْنِ هُلْبٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ يَنْصَرِفُ عَنْ يَمِيْنِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ وَرَأَيْتُهُ قَالَ يَضَعُ هَذِهِ عَلَى صَدْرِهِ وَضَعَ يَحْيَى الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فَوْقَ الْمِفْصَلِ.

 ক্বাবীছাহ বিন হুলব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেছেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে ডান ও বামে ফিরতে দেখেছি এবং হাতকে বুকের উপর রাখার কথা বলতে শুনেছি। অতঃপর ইয়াহইয়া ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখেন।(মুসনাদ আহমদ হা/২২০১৭ সনদ সহীহ্)

প্রকাশ থাকে যে,  স্বয়ং ইবনুল কাইয়েম তার আরেকটি গ্রন্থে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের তরীকা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় ডান হাত দ্বারা বাম হাতকে আঁকড়ে ধরে জোড়ার উপর রেখে বুকের উপর রাখতেন’। [. আস-সালাতু ওয়া হুকমু তারিকিহা পৃ. ১৬০।]

এর দ্বারাও প্রতীয়মান হল যে, ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহিমাহুল্লাহর মতে এ কথাটি প্রমাণিত যে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধতেন।

এন্টিভেনাম জবাব:  যদি বুকের উপরে হাত বাধা মাকরুহ হয়। তাহ‌লে হানাফী মাযহাবের নারীরা কি এই মাকরুহ আমল করে। এবং হানাফীরা তা উত্সাহিত করেন? 

বইঃ সালাতে হাত বাধার স্থান 

মুখতাছার : ব্রাদার রাহুল হোসেন রুহুল আমিন

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.