একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ এক আনসারি সাহাবির বাগানে প্রবেশ করলেন, তখন সেখানে দুটি উট লড়াই করছিলো এবং কাঁপছিলো। যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ এদের নিকটে গেলেন, তখন উট দুটি তাদের ঘাড় জমিনে ঝুঁকিয়ে দিলো। সাথে থাকা লোকটি বলে উঠলেন, ‘উট আপনাকে সিজদা করেছে।’ তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ (তার কথাকে নাকচ করে) বললেন, ‘‘কোনো ব্যক্তির উচিত নয় অন্য কাউকে সিজদা করা।’’ [ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৪১৬২; হাদিসটি হাসান]
.মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট দুটো অঙ্গ হলো: নাক এবং কপাল। এই দুটো সিজদার প্রধান অঙ্গ। সিজদা পাওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার। অতএব, কোনো পিরের পায়ে বা মাজারে সিজদা দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম এবং শির্ক। যদি কেউ কোনো পির, কোনো প্রাণী বা অন্য কোনো কিছুকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদা দেয়, তবে সে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমতে মুশরিক (কাফির) হয়ে যাবে। তবে, যদি কেউ শুধু ‘সম্মান প্রদর্শনার্থে’ কোনো মাজারে বা কাউকে সিজদা করে (তার কাছে কিছু না চায় বা তার ইবাদত না করে), তবে সে অনেক আলিমের মতে কাফির হবে না, কিন্তু নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহগার হবে। কারণ, এভাবে সিজদা দেওয়াও হারাম।
.
রাসুল ﷺ মৃত্যুর পূর্বে পাঁচটি বিষয় বলেছিলেন। এর মাঝে একটি ছিলো: ‘‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মত তাদের নবি ও নেককারদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছিলো। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে সিজদার স্থান বানিও না। আমি সেটি থেকে তোমাদের নিষেধ করছি।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১০৭৫]
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, ‘‘ইহু* ও খ্রি*নদের প্রতি আল্লাহর অভিশ|প; তারা তাদের নবিদের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে।’’ আয়িশা (রা.) বলেন, একই আশঙ্কা না থাকলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরকে উন্মুক্ত রাখা হতো। কিন্তু আমি আশঙ্কা করি যে, (উন্মুক্ত রাখা হলে) একে সিজদার স্থানে পরিণত করা হবে।’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৩৩০]
.
এই হাদিস থেকে বুঝতে পারছি, বুজুর্গদের কবর তথা মাজারকে সিজদার স্থান বানানো যাবে না। মাজারে সিজদা দেওয়া যাবে না।
.
মু‘আয (রা.) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবিজিকে সিজদা করেন। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে মু‘আয! এ কী?’’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদের সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো।’ তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘‘তোমরা তা করো না।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৮৫৩; হাদিসটি হাসান সহিহ]
.
যেখানে স্বয়ং রাসুলকে সিজদা দেওয়ার অনুমতি নেই, সেখানে কোনো পির, দরবেশ বা অন্য কোনো কিছুকে সিজদা দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
.
কিছু লোক বলে, ‘ফেরেশতারা আদমকে সিজদা দিয়েছিলো, ইউসুফ (আ.)-কে তার ভাইয়েরা সিজদা দিয়েছিলো। তাই, আমাদের জন্যও এ ধরনের সম্মানসূচক সিজদা বৈধ।’ তাদের এই কথা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও ভুল। কারণ আদম (আ.) ও ইউসুফ (আ.)-এর শরিয়ত (জীবনবিধান) আমাদের জন্য কেবল ততটুকু অনুসরণীয়, যতটুকু মুহাম্মাদি শরিয়তের সাথে মিলবে। এককথায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পর পূর্ববর্তী সকল নবির শরিয়ত রহিত হয়ে গেছে। যেমন: দাউদ (আ.)-এর উম্মতের জন্য শনিবারে মাছ শিকার করা অবৈধ ছিলো। অথচ, আমাদের জন্য এরকম কোনো বিধি-নিষেধ নেই। সুতরাং, পূর্ববর্তী নবিদের উদাহরণ টানা যাবে না।
.
সর্বশেষ দুটো কথা:
কোনো ব্যক্তিকে যদি দেখেন, মাজারে বা কারও পায়ে সিজদা দিচ্ছে, তবে সাথে সাথেই তাকে ‘মুশরিক’ বলবেন না। কারণ এদেশের প্রচুর মানুষ দ্বীনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ মূর্খ। এরা এই সিজদার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে না। অজ্ঞতার কারণে আলিমগণ এই শ্রেণির লোকদের সরাসরি ‘মুশরিক’ বা ‘কাফির’ বলেন না; শুধু কবিরা গুনাহগার বলেন। কিন্তু কেউ যদি এটা জানে যে, পিরের পায়ে বা মাজারে কিংবা অন্য কোনো কিছুতে সিজদা দেওয়া শির্ক, তবুও সে ইবাদত বা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে সিজদা করে, তবে সে মুশরিক (কাফির) হয়ে যাবে। সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। তাকে নতুন করে কালিমা পড়ে মুসলিম হতে হবে।