বিশুদ্ধ তাওবাহর পদ্ধতি কি?

বিশুদ্ধ তাওবাহর পদ্ধতি কি?


মানুষের চিরচারিত একটি অভ্যাস হল ভূল করা। মানুষ ভূলের উর্ধ্বে নয়। মানুষ মাত্রই ভূল। মানুষের আরবী প্রতিশব্দ ইনসান। ইনসান শব্দটি নাসয়ুন থেকে এসেছে। এর অর্থ হল ভূল করা,ভূলে যাওয়া। তাই মানুষ ভূল করে।আর তার প্রকৃতিই হল ভূল করা। তাইতো যুগ যুগ ধরে মানুষ ভূল করে এসেছে।

কিন্তু ভূল থেকেও তো ফিরে আসা যায়।পাপেরও তো প্রায়শ্চিত্ত আছে। হ্যাঁ, আল্লাহ মানুষের ভূল ও পাপের প্রায়শ্চিত করার সুযোগ দিয়েছেন। দিয়েছেন তাদের সুযোগ পাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার। সুযোগ দিয়েছেন নিষ্কলুষ পবিত্র হওয়ার। আর সেটাই হল তাওবাহ। ফালিল্লাহিল হামদ।

আসলে পাপকাজ করার পর তাওবাহ করলে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। আত্মা লাভ করে শান্তি ও প্রবোধ। এই পরম শান্তিকে যারা সাদরে গ্রহণ করে তারাই উত্তম,তারাই শ্রেষ্ঠ। তাদের সম্পর্কেই প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, "প্রত্যেক আদম সন্তানই ভূল করে।আর সর্বশ্রেষ্ঠ ভূলকারী তো সেই, যে তার ভূল থেকে প্রত্যাবর্তন করে(অর্থাৎ, তাওবাহ করে)।" (ইবনু মাজাহ;হা:৪২৫১;সনদ:হাসান)

কোন মুসলিম পাপে বা অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়লে, তার জন্য ওয়াজিব হল শীঘ্রই তা থেকে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা। কেননা সে জানেনা কখন তাকে মরতে হবে। আর মৃত্যুর আগে তাওবাহ করতে না পারলে তো ধ্বংস অনিবার্য। আর একথা বলাই বাহুল্য যে,মৃত্যু কখনো ঢাকঢোল পিটিয়ে আসে না। মহান আল্লাহ বলেছেন,"আর প্রত্যেক উম্মাহর জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট একটা সময়।যখন সেই সময় তাদের নিকটে এসে যাবে, তারা তা বিন্দুমাত্রও পিছাতে পারবে না,আর না পারবে আগাতে।"(আ'রাফ:৩৪)

তাওবাহ শব্দের অর্থ হল ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা,অনুশোচিত হওয়া প্রভৃতি।

শার'ঈ পরিভাষায়:অতীতের পাপ কাজ বা অপরাধ কর্ম করার জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা এবং পুনরায় গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।

আরো বিস্তারিতভাবে বলা যায়, অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তা'আলা যা অপছন্দ করেন তা হতে তিনি যা ভালবাসেন তার দিকে প্রত্যাবর্তন করাকেই তাওবাহ বলে।

এই তাওবাহর রয়েছে নির্দিষ্ট পদ্ধতি। শারী'আত নির্দেশিত সেই পদ্ধতিতে তাওবাহ না করলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনার আলোকে যে কোন পাপ থেকে ফিরে আসার জন্য যে তাওবাহ করা হয় তার কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সেই শর্তগুলো পূরণ না হলে তাওবাহ কবুল হয় না।সংক্ষেপে শর্তগুলো নিম্নে আলোচিত হল।

১. তাওবাহ হতে হবে কেবলমাত্র আন্তরিকভাবে আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ। কেননা আন্তরিকতা ছাড়া কোন ইবাদতই আল্লাহ তা'আলা গ্রহণ করেন না।(দ্র:যুমার:২-৩;তাহরীম:৮)

২. তাওবাহ করার সঙ্গে সঙ্গে পাপ কাজ বর্জন করতে হবে। নিজে পাপ কাজে অটল থেকে শতবার মুখে 'তোবা' 'তোবা' করলেও তাওবাহ কবুল হবে না।(দ্র:আনফাল:৩৮;ড.সালিহ আল ফাওযান হাফি., আল খুত্বাবুল মিম্বারিয়্যাহ;পৃষ্ঠা:৪৪৯-৪৫০)

৩. বিগত পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে।অনুশোচনা ছাড়া তাওবাহ কবুল হয় না। (ইবনু মাজাহ;হা:৪২৫২;সনদ:সহীহ)

৪. মরণের পূর্বে আর কখনো পাপের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না- মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা। এই ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প না থাকলে তাওবাহ কবুল হবে না। কেননা অন্তরে পরবর্তীতে আবার পাপকাজ করার ইচ্ছা লালন করলে, আল্লাহ বান্দার প্রতি ক্রুদ্ধ হন। আর এটাতো সুস্পষ্ট ধোঁকাবাজি।(আলে ইমরান:১৩৫)

৫. বান্দার অধিকার হরণ করে অপরাধ করলে সে অধিকার আদায় করে তাওবাহ করতে হবে। বান্দার অধিকার হরণ করলে দু'ধরণের পাপ হয়ে থাকে।প্রথমত,আল্লাহর নির্দেশের অবমাননা। দ্বিতীয়ত,বান্দার অধিকার নষ্ট করা। একনিষ্ঠ তাওবাহ করলে আল্লাহ প্রথমটির পাপ মার্জনা করতে পারেন। কিন্তু দ্বিতীয়টি আল্লাহ মার্জনা করবেন না। অপরাধী যদি মাযলুম ব্যক্তির অধিকার ফিরিয়ে দেয়, তবেই আল্লাহ ঐ পাপ ক্ষমা করতে পারেন। (সহীহ বুখারী;হা:২৪৪৯;সহীহ মুসলিম;হা:২৫৮১)

৬. তাওবাহ কবুল হওয়ার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাওবাহ করতে হবে। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেই তাওবাহর দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তাওবাহ করতে হবে তার দরজা বন্ধ হওয়ার পূর্বেই। আর তাওবাহর দরজা বন্ধ হওয়ার সময় দু'টি। এক. দুয়ারে মৃত্যু উপস্থিত হলে। (নিসা:১৭-১৮;ইউনুস:৯০-৯২;ইবনু মাজাহ;হা:৪২৫৩)

 দুই. পশ্চিমাকাশে সূর্য উদিত হলে।(আন'আম:১৫৮;সহীহ বুখারী;হা:৪৬৩৩;সহীহ মুসলিম;হা:৯৭,২৭৫৯)

উপরিউক্ত শর্তসাপেক্ষে কেউ তাওবাহ করলে তার তাওবাহ কবুল হবে বলে আশা করা যায়। আর আল্লাহই তো সর্বশক্তিমান।

সুতরাং, আসুন আমরা বিশুদ্ধ তাওবাহ করি। যদি আমরা যথার্থ তাওবাহ করতে সক্ষম হই তবে আল্লাহ অবশ্যই আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। কেননা আমরা সামান্যতম আল্লাহ অভিমুখী হলেই,তিনি আমাদের ব্যাপারে অধিক আগ্রহী হন।

পরিশেষে রাসূল সা. এর একটি হাদীস।হাদীসে কুদসী।

আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, "আমি আমার বান্দার ধারনার নিকটেই অবস্থান করি। বরং আমি তার সাথেই থাকি,যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে,তবে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোন মজলিসে স্মরণ করে,তবে আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়,তবে আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়,তবে আমি তার দিকে এক বাহু পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার নিকটে হেঁটে হেঁটে আসে, তবে আমি তার নিকটে দৌঁড়ে দৌঁড়ে যাই।" সুবহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহ। (সহীহ বুখারী;হা:৭৪০৫;সহীহ মুসলিম;হা:২৬৭৫)

আসুন,আমরা আল্লাহর নিকটে বিনীতভাবে প্রত্যাবর্তিত হই। যাতে তিনি আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.