বিবাহ ইচ্ছুক ভাইদের জন্য উপদেশ, এটা এক ভাইয়ের পার্সপেক্টিভ থেকে লেখা। সবার সাথে নাও মিলতে পারে।
"বিবাহ ইচ্ছুক ভাইদের জন্য কয়েকটি ফ্রি পরামর্শ।"
০১. কুফু ব্যতীত কখনোই বিয়ে করতে যাবেন না। (অন্ততঃ এই যামানায় এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) কুফু মানে দুনিয়াবী বিষয়ে কুফু। সামাজিক স্ট্যাটাস মিলে কিনা, আর্থিক অবস্থা মিলে কিনা, মানসিকতা মিলে কিনা ইত্যাদি।
"গরীব ঘরের মেয়ে বিয়ে করলেই ভালো মেয়ে পাবো" এরকম ধারণা থেকে বেড়িয়ে আসুন। আপনি যদি ধনী ঘরের হয়ে থাকেন, বেশি গরীব ঘরে বিয়ে করলে বউ হঠাৎ বড়লোকী স্বভাবে পেয়ে বসতে পারে। ধনী বা গরীব মূল বিষয় নয়। সমতা (কুফু) খুজে বের করুন। এটাই জরুরি।
০২. "আমার কাছে বাহ্যিক সৌন্দর্য কোনো বিষয় নয়" এসব ছ্যাবলামি নৈতিকতা পরিত্যাগ করুন। এগুলো মূলত নৈতিকতাও নয়। আপনার ফ্যান্টাসি/আবেগ। দুদিন পর নিজেই এসব ছ্যাবলামির জন্য হায়হুতাশ করবেন।
সৌন্দর্য মানে অমুক তমুক নায়িকাদের মত হতে হবে, সেটা না। আপনার নিজের চোখে যেটা সুন্দর সেটা। অনেকের কাছে ফর্সা ভালো লাগে, অনেকের আবার শ্যামলা ভালো লাগে। অনেকের কাছে বেশি লম্বা ভালো লাগে, অনেকের আবার একটু হাইট কম ভালো লাগে।
আর অবশ্যই পাত্রী দেখার সময় মুরুব্বি কোনো মাহরাম মহিলা সাথে নেবেন। কারণ অবিবাহিত ছেলেপেলেদের দুনিয়ার সবকিছুই সুন্দর লাগে। তাই খুব খেয়াল কইরা।
০৩. যাদের লিডারশীপ/ডমিনেশনে ঘাটতি আছে তারা নিজের বয়সের থেকে অন্ততঃ ৭ থেকে ১০ বছরের ছোট কোনো পাত্রী বিয়ে করার চেষ্টা করবেন। না হলেও অন্ততঃ ৫ বছর। হ্যাঁ সমবয়সী অনেক হ্যাপি কাপল আছেন আলহামদুলিল্লাহ। আবার বয়সে বড়ও আছেন।
০৪. 'চেক এন্ড ডাবল চেক' উসূলের উপর আমল করবেন। ভালো করে খোজ খবর নেবেন। মেয়ের আখলাক কেমন, মুরুব্বিদের সাথে আচরণ কেমন, নম্রভদ্র কিনা, বাবা মায়ের বৈধ কথার অনুগত কিনা। বাবা মায়ের সাথে আচরণ কেমন ইত্যাদি। প্রয়োজনে কিছুদিন সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন সিচুয়েশন।
০৫. 'সন্দেহবাতিক' কিনা ভালো করে খোজ খবর নেবেন। এটা খুজে বের করা খুব কঠিন। একসাথে দীর্ঘদিন থাকা ব্যতীত এটা বুঝা মুশকিল।
তারপরও যতটুকু পারেন খোজ নেবেন। নইলে পরে জীবন ত্যানাত্যানা হয়ে যেতে পারে।
০৬. মোহর আপনি যতটুকু দিতে পারবেন, ততটুকুই ধরবেন। অতি পন্ডিতি করে বেশিতে রাজি হবেন না। 'বিয়ে করে লাইফে বারাকাহ আসবে, তখন ম্যানেজ করে মোহর দিয়ে ফেলবো' এসব ফাও চিন্তা বাদ দেন। যা আছে সেটার উপর আমল করেন। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা কেউই অগ্রীম জানে না। নিজের সামর্থের উপর কায়েম থাকেন।
আপনার সামর্থ মত মোহরে যদি পাত্রীপক্ষ রাজি না হয়, তবে চিপাগলি দিয়ে ফুলস্পিডে দৌড় দেন। দুনিয়াতে পাত্রীর অভাব পরেনি।
০৭. নিজের অবস্থা, ইনকাম, দ্বীনি অবস্থা ইত্যাদি সবকিছু পাত্রী ও তার পরিবারের কাছে পরিষ্কার করে বলে দিন। কোনোকিছু গোপন করবেন না। বয়স থেকে নিয়ে ক্যারিয়ার, কোনোকিছুতেই সামন্য লুকোচুরি বা গোপন করার চেষ্টা করবেন না। এতে বিয়ে হলে হবে, না হলে নাই।
০৮. বাহ্যিক পোশাক-আশাক (বোরকা-নিকাব) দেখেই পাগল হবেন না। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বা পোস্ট দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন না। মানুষের ভার্চুয়াল অবস্থা রিয়েল লাইফের বিপরীতও হতে পারে।
সবচেয়ে জরুরি হলো আচার-আচরণ, বিহেভিয়ার। দ্বীনদারিতা হলো আচার-আচরণ। বেয়াদবের সাথে সংসার করার চেয়ে বাঘের খাচায় বন্দী থাকা উত্তম। কোনো স্ত্রী যদি নফল ইবাদাত নাও করে, স্বামীর সাথে তার আচরণ যদি ভালো হয়, তবে স্বামীর জীবনও জান্নাত আর স্ত্রীর জন্যও জান্নাতের গ্যারেন্টি তো আছেই। কাজেই হিসেব করে পা ফেলুন।
০৯. 'শশুড়বাড়ি থেকে কোনোকিছু পাওয়ার আশা রাখবেন না। এরকম আশা রেখে কাউকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন না। সারাজীবন বউয়ের 'বউ' হয়ে থাকতে হবে। আপনার রিজিক আপনার জন্য নির্ধারিত। সেটা বাজারি বানাবেন না।
১০. বিবাহিত জীবন ভালো-মন্দ যেকোনোটাই হতে পারে। হয়তো সুখী হবেন, নয়তো পরীক্ষায় পরবেন। পরীক্ষায় পরার মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখুন। বিয়ে করাটা জুয়া খেলার মত। যেকোনো কিছু হতে পারে।
সাবধানতার সাথে না এগুলে পরে হয়তো এমন পরিস্থিতে পরতে হবে, গিলতেও পারবেন না ফেলতেও পারবেন না।