আল বিরুনী এর ইতিহাস

আল বিরুনী এর ইতিহাস


বুরহানুল হক আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আল বিরুনী সংক্ষেপে আল বিরুনী হিসেবেই পরিচিত। তিনি আনুমানিক ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্তানের খোয়ারিজম এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং আনুমানিক ১০৫২ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান আফগানিস্তানের গজনি এলাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ইরাকের একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাল্যকাল কেটেছিল তৎকালীন ইরাকের রাজপতি ‘আবু মনসুর বিন আলী বিন ইরক’-র অনুগ্রহে। তিনি প্রায় ২২ বছর রাজকীয় অনুগ্রহে কাটান। 

কিন্তু পরবর্তীতে সুলতান মামুদ ইরাক আক্রমণ করে দখল করে ফেললে তার সমাপ্তি ঘটে। আল বিরুনী বাল্যকাল থেকে রাজপরিবারের অনুগ্রহে থেকে শিক্ষালাভ করায় তার পরিবার সম্পর্কে তেমন ধারণা পাওয়া যায় না। আল বিরুনীর শৈশবকাল এবং বংশপরিচয় সম্পর্কেও তেমন তথ্য পাওয়া যায় না।

সুলতান মামুদের হাতে যখন ইরাকের পতন ঘটে, তখন আল বিরুনী ইরাকের পূর্বাঞ্চলে চলে আসেন। সেখানে কাস্পিয়ান সাগরের নিকটবর্তী ‘গুরগান’ নামক একটি শহরে আরেক মনীষী ইবনে সিনার সাথে তার দেখা হয়। এছাড়াও সেখানে অবস্থানকরাকালীন আল বিরুনী সেখানকার রাজা কাবুসের সাহচর্য লাভ করেন। 

কিন্তু ক্রমে ক্রমে সুলতান মামুদের শাসনের পরিসীমা বেড়ে যাচ্ছিল। সে-অঞ্চলটিও সুলতান মামুদ দখল করে ফেলেন এবং তিনি আল বিরুনী ও ইবনে সিনাকে তার দরবারে আহ্বান জানান। কিন্তু ইবনে সিনা সে আহ্বান প্রত্যাখান করে চলে গেলেও আল বিরুনী সে আহ্বান গ্রহণ করেন এবং সুলতান মামুদের দরবারের সদস্য হয়ে যান! 

আল বিরুনী একাধারে একজন জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিদ, গণিতবিদ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, ইতিহাসবেত্তা, দার্শনিক ইত্যাদি ছিলেন। তিনি চাঁদের বিভিন্ন দশা নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর নিজস্ব ভাষ্যমতে তিনি ১১৪ টি বই লিখেছেন! সুলতান মামুদের ছেলে মাসউদের নামে আল-বিরুনী 'কানুন আল মাসউদ' নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেটি জ্যোতিষ্ক নিয়ে লেখা। 

এছাড়াও একই বইতে তিনি ত্রিকোণমিতি নিয়েও আলোচনা করেছিলেন। ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান নিয়েও আল-বিরুনী কাজ করেছিলেন। আল-বিরুনী একবার ভারতবর্ষ ভ্রমণে এসেছিলেন। তখন তিনি লক্ষ করেন যে, ভারতীয় জাদুকররা রসায়নকে বাজেভাবে প্রয়োগ করছে! যা তাকে মর্মাহত করেছিল।

আরবি, ফারসি, সিরীয়, গ্রিক, সংস্কৃত, হিব্রু-সহ আরো অনেক ভাষায় আল-বিরুনীর দখল ছিল। কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা দেওয়ার প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগেই আল-বিরুনী এই ব্যাপারে মতবাদ দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন যে, ফুলের পাপড়ি সংখ্যা হয়- ৩, ৪, ৫, ৬ ও ১৮। তিনি চিকিৎসাবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন। 

দর্শন এবং যুক্তিবিদ্যায় আল-বিরুনী খুবই পারদর্শী ছিলেন। তার হাত ধরেই তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের সূচনা ঘটে।  

১০৫২ সালে এই মহান স্কলার আফগানিস্তানের গজনীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে, তিনি না থাকলেও তার কাজের মধ্য দিয়ে তিনি আজও বেঁচে আছেন! দুঃখের বিষয় হচ্ছে মধ্যযুগের অন্যান্য স্কলারদের মতো তিনি কখনোই গুরুত্ব পাননি! 

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.