ক্ষুদিরাম বসুকে আমরা অনেকেই চিনি। তিনি কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু যেই গাড়িতে বোমা ছুঁড়েছিলেন সেই গাড়িতে দুর্ভাগ্যবশত কিংসফোর্ড ছিল না অর্থাৎ কিংসফোর্ডকে হত্যার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এরপর ব্রিটিশ ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেয়। খুবই অল্প বয়সে এত বড় সাহসিকতা দেখানোর জন্য আমরা সবাই তাঁকে স্যালুট করি এবং দেশ প্রেমিকদের তালিকায় শামিল করি যদিও তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
কিন্তু ঠিক একই উদ্দেশ্যে সফল হওয়া একজন ব্যক্তিকে মনে রাখা হয় না। তাঁর নাম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। কিংসফোর্ড এর মতোই আর একজন কুখ্যাত বিচারক ছিল যার নাম জন প্যাক্সটন নরম্যান। সে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খুব কোঠর সাজা শোনাতো। অনেককে সে ফাঁসির আদেশও শুনিয়েছিল।
1871 সালের সেপ্টেম্বর মাসে, নরম্যান যখন কলকাতা টাউন হলের সিঁড়ি দিয়ে নামছিল, আবদুল্লাহ তাকে আক্রমণ করে এবং তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহর পোস্টার কলকাতার অলিতে গলিতে লাগানো হয় যাতে করে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়, তারই একটি দুর্লভ ছবি নিচে দেওয়া হলো। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
কিন্তু এই বীরপুরুষের স্থান ইতিহাসে হয়নি। এইসব ইতিহাস খুঁজে পেতে অনেক কাঠ কয়লা পড়াতে হয়, সহজে পাওয়া যায় না। নিচের দেওয়া রেফারেন্সে এই ঘটনা আপনি পাবেন কিন্তু প্রথম দুটি বইয়ে তাঁকে উগ্রবাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কারণটা তো জানেনই যে, যারাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকতো, ব্রিটিশ তাদের উগ্রবাদী/ সন্ত্রাসী ইত্যাদি তকমা দিত। তারা ভগৎ সিংকেও সন্ত্রাসী তকমা দিয়েছিল। আর তৃতীয় রেফারেন্সটিতে মূল ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশদের নজরে তিনি উগ্রবাদী কিন্তু আমাদের নজরে তিনি একজন দেশ প্রেমিক ও বিপ্লবী। কিন্তু আফসোস! তাঁকে আমরা কতজন জানি??
রেফারেন্সঃ
১. McQuade, Joseph (2020). A Genealogy of Terrorism: Colonial Law and the Origins of an Idea, পৃষ্ঠা নম্বর ৭৫-৭৬।
২. Ram Narayan Kumar (6 November 2012). Martyred but Not Tamed: The Politics of Resistance in the Middle East, পৃষ্ঠা নম্বর ৭৯।
৩. Volume-2: 1803-1920, G. S. Chhabra (2005). Advance Study in the History of Modern India, পৃষ্ঠা নম্বর ৫৬২।