মুহররম মাসে না কি বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ? এ কারণে অনেক মানুষ এ মাসে বিয়ে করে না এবং বিয়ে দেয়ও না। এটা কি সঠিক?

মুহররম মাসে না কি বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ? এ কারণে অনেক মানুষ এ মাসে বিয়ে করে না এবং বিয়ে দেয়ও না। এটা কি সঠিক?

ইসলামের দৃষ্টিতে মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। বরং বছরের কোন মাসেই কোন সময়ই বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। এ মর্মে যে সব কথা প্রচলিত রয়েছে সব‌ই ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার।

মুহররম মাসে না কি বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ? এ কারণে অনেক মানুষ এ মাসে বিয়ে করে না এবং বিয়ে দেয়ও না। এটা কি সঠিক?


⛔মুহররম মাস নিয়ে শি*য়াদের বাড়াবাড়ি:

মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি করা ঠিক নয়- মর্মে প্রচলিত কথাটি শি*য়া-রাফেযি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মিথ্যা প্রচারণা হতে পারে। 

কেননা, এ মাসে (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) হুসাইন রা. কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা মিথ্যা মায়াকান্না আর অতিভক্তি দেখিয়ে এ মাসে অনেক বিদ'আতি কার্যক্রম করে থাকে এবং শরিয়তের অনেক বৈধ জিনিসকে অবৈধ করে থাকে। যেমন তারা বলে, মুহররম মাসে নতুন জামা পড়া যাবে না, গোস্ত-মাছ ইত্যাদি ভালো খাবার খাওয়া যাবে না বরং কেবল নিরামিষ খেতে হবে, বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শুতে হবে, বিয়াশাদী দেয়া বা করা বৈধ নয়...ইত্যাদি। 

অথচ এ সব কথা শুধু দলীল বহির্ভূত নয় বরং দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইসলামি শরিয়ত যা নিষেধ করে নি তা নিষেধ করা মানে দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্ঘন এবং ধৃষ্টতা প্রদর্শন।

নি:সন্দেহে হুসাইন রা. এর মৃত্যুতে আমরা বেদনাহত ও মর্মাহত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে সবরের পরিচয় দিতে হবে এবং তাদের জন্য দুআ করতে হবে। কারণ হুসাইন রা. এর পূর্বে তার পিতা আলি ইবনে তালিব রা., উসমান বিন আফফান রা., উমর ইবনুল খাত্তাব রা. সহ অসংখ্য সাহাবি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। অথচ তাদের মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্ব মর্মাহত হলেও এ সব নিয়ে কোন ধরণের বাড়াবাড়ি মূলক কার্যক্রম করে না। 

📍কেননা ইসলাম কারো মৃত্যু/শাহাদাতকে কেন্দ্র করে বিলাপ করা, শরীরে আঘাত করা, শরীর রক্তাক্ত করা, পরিধেয় কাপড় ছেঁড়া, মাটিতে গড়াগড়ি করা, উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা, শোক দিবস পালন করা, কালো পোশাক ও কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক র‍্যালী ও তাজিয়া মিছিল করা...ইত্যাদি কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ হারাম ও জাহেলিয়াতের কাজ হিসেবে ঘোষণা করেছে। 

📍নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ

“সে ব্যক্তি আমাদের লোক নয় যে গালে চপেটাঘাত করে, জামার পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত ডাকে। “ [সহীহ বুখারি: অনুচ্ছেদ: সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নং ১২৯৭, মাকতাবা শামেলা]

 📍 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,

النِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ

“বিলাপ করা (কারও মৃত্যুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন গুণের কথা উল্লেখ করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, জামা-কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি) জাহেলি যুগের কাজ।”

 [ইবনে মাজাহ, অনুচ্ছেদ: মৃতকে কেন্দ্র করে চিৎকার করে বিলাপ করা নিষিদ্ধ। আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১২৮৬, মাকতাবা শামেলা] 

আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।

সুতরাং মুহররম মাসকে কেন্দ্র করে, আমাদের সমাজে যে সেকল বাতিল ও বিদ'আতি কার্যক্রম এবং ভিত্তিহীন বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সেগুলো থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে এবং সামাজিকভাবে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ একদিন আমাদের সমাজ বিদ'আত ও কুসংস্কারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। 

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ধর্মের নামে সকল অধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.