অভিধান প্রণয়ন এর ইতিহাস

ovidhan, অভিধান প্রণয়ন এর ইতিহাস, আবির হোসেন, Abir Hosen

অভিধান প্রণয়ন এর ইতিহাস

ভাষার বিশৃঙ্খল শব্দরাশির মানরূপ সুস্থিত করার উদ্দেশ্যেই রচিত হয় অভিধান। বিশ্বের আধুনিক ভাষাগুলো যখন দৈনন্দিন কিছুটা সাহিত্যিক প্রয়োজন মিটিয়ে আরো ব্যাপক দায়িত্বের ভার গ্রহণে উদ্যোগী হয়, যখন ওই ভাষা-অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষারূপ থেকে উৎসারিত হতে থাকে এক-একটি মানভাষা, তখন সচেতনভাবে মান-ভাষারূপ স্থির করার জন্যে সংকলিত হয় আনুশাসনিক অভিধান— যার লক্ষ ভাষার বিশুদ্ধ অবিচল রূপ নির্দেশ ও ভাষাকে অনিবার্য বিনাশ থেকে রক্ষা করা। 

তাই আধুনিক কালে সচেতন ভাষাপরিকল্পনায় যাঁরা প্রথমে অংশ নেন, তাঁরা অভিধান প্রণেতা। অভিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভাষার স্থির-শুদ্ধমানরূপ শনাক্তির প্রথম পদক্ষেপ নেয় ইতালি, দ্বিতীয় পদক্ষেপ নেয় ফরাসি দেশ। 

অভিধান প্রণয়ন এর ইতিহাস

১৫৮২ অব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ইতালিতে ‘আকাদেমিয়া দেল্লা কুকা’, যার মূল লক্ষ ছিল বিশুদ্ধ ইতালীয় ভাষার রূপনির্ণয়। এ-উদ্দেশ্যে সংকলিত হয় আকাদেমির বিখ্যাত অভিধান 'ভোকাবোলারিও দেইলি আকাদেমিচি দেল্লা ক্রুস্কা’ (১৬১২)। ১৬৩৫ অব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ল্য আকাদেমি ফ্রঁসেজ’ বা ফরাসি একাডেমি। 

১৬৯৪ অব্দে প্রকাশিত হয় ফরাসি একাডেমির বিখ্যাত ফরাসি ভাষার অভিধান। আঠারো শতকের ইংল্যান্ডে, জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে দেখা দেয় এক নতুন প্রবণতা, যাকে বলতে পারি শৃঙ্খলা ও বিধিবিধানাকাঙ্ক্ষা। আঠারো শতকের সুশৃঙ্খল ও বিধিপ্রবণ ইংরেজ জাতি যখন তাকায় আপন ভাষার দিকে, ও ধ্রুব-অবিচল-মৃত ল্যাটিনের দিকে, তখন তাদের কাছে প্রতিভাত হয় যে ইংরেজি একটি বিশৃঙ্খল ভাষা : তার নেই কোনো ধ্রুব ব্যাকরণ, তার সূত্রগুলো অস্থির যতটা পালিত হয় তার থেকে অনেক বেশি থাকে অপ্রতিপালিত। 

১৬৯৭ অব্দে ডিফো একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন, আর ১৭১২তে সুইফট তাঁর ইংরেজি ভাষার বিশুদ্ধিকরণ, উন্নয়নবিধান ও স্থিরীকরণবিষয়ক প্রস্তাব—এ ইংরেজি ভাষার দোষত্রুটি, অশুদ্ধতা, অবক্ষয়ের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তার করেন। 

১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে বেরোয় জনসনের বিখ্যাত অভিধান ‘এ ডিকশনারি অফ দি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ’ যাকে ইংরেজ জাতি গ্রহণ করে এক মহৎ কীর্তিরূপে : ফরাসিরা যা সম্পন্ন করেছে একাডেমির সাহায্যে ইংরেজ তা করেছে এক ব্যক্তির শ্রমে-মেধায়। এ-তৃপ্তি পাওয়ার সাথে সাথে ভাষার মানরূপ শনাক্তির জন্যে একাডেমি প্রতিষ্ঠার সমস্ত স্বপ্ন ত্যাগ করে ইংরেজ। 

জনসনের অভিধানের একশো ঊনতিরিশ বছর পর ১৮৮৪ অব্দে প্রকাশিত হয় নতুন বর্ণনামূলক-ধারার অভিধানের প্রথম খণ্ড, এবং শেষ খণ্ড বেরোয় ১৯২৮-এ। এ-অভিধানের আদিনাম ‘এ নিউ ইংলিশ ডিকশনারি অনূ হিস্টরিক্যল্ প্রিন্সিপ্‌ল্‌স্‌’, যা তখন বিশ্রুত ‘দি অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি' নামে। এ-অভিধানে প্রতিষ্ঠিত হয় অভিধান প্রণয়নের এক নতুন ধারা, যা বর্ণনামূলক ও ঐতিহাসিক। 

এতে স্থান পায় ভাষায় ব্যবহৃত সমস্ত শব্দ, নির্দেশিত হয়েছে কোন্ শব্দটি কখন প্রথম ব্যবহৃত বা লিপিবদ্ধ হয় ইংরেজিতে, বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিটি শব্দের কালেকালে অর্থবদলের ইতিহাস, এবং অপ্রচলিত শব্দের ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে, শব্দটি কোন্ বছর শেষবারের মতো লিপিবদ্ধ হয়েছে। 

অর্থাৎ এ-অভিধানে পাওয়া যায় ইংরেজি ভাষার প্রতিটি শব্দের জীবনী—তার উদ্ভব, বিকাশ ও লোকান্তরের সমস্ত তথ্য। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিক্শনারি অভিধানতত্ত্বের দিক দিয়ে নতুন-আধুনিক ধারার প্রবর্তক; এবং অভিধান প্রণয়নে চূড়ান্ত মনীষার নিদর্শন।

Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.