মাতাপিতার সাথে সদাচার করার বিষয়ে কুরআনের বাণী

মাতাপিতার সাথে সদাচার করার বিষয়ে কুরআনের বাণী, Abir Hosen, Islam, News, Bangladesh

 মাতাপিতার সাথে সদাচার করার বিষয়ে কুরআনের বাণী

প্রথম নির্দেশনা: আল্লাহ তাআলা বলেন,  وقضى ربك ألا تعبدوا إلا إياه وبالوالدين إحسانا “তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা কেবল তারই ইবাদাত করবে এবং মাতাপিতার প্রতি সদাচার করবে।” [সূরা ইসরা, ১৭:20]

আবূ বকর ইবনুল আম্বারি (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'এই আয়াতের (আলকদ-উ) শব্দটি ‘নিশ্চয়তা’ অর্থ দেওয়ার জন্য আসেনি, বরং এটি 'নির্দেশ ও ফরজ' হওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।' আভিধানিকভাবে (আলকদ-উ) শব্দটির মূল অর্থ হলো, কোনও বিষয় সম্পর্কে চূড়ান্ত দৃঢ়তা বোঝানো। [যেমন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রদিয়াল্লাহু আনহু)-এর শোকগাথা রচনা করে এক কবি বলেছেন, قطبت أمورا ثم كادرت بعده * بوائق أكتافها لم تقتي —আল-কামূসুল মুহীত, ৪/৩৮১; তাজুল আরূস, ১০/২৯৬।]

এই আয়াতে দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ও তাঁদের সম্মান করা। فلا تقل لهما أف আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, 'তুমি তোমার কাপড় (মাতাপিতার সামনে) ঝাড়া দিয়ো না; তাদের গায়ে ধুলোবালি লাগতে পারে। [ইবনু জারীর তাবারি, তাফসীর, ১৫/৪৮। ]

মাতাপিতার সাথে সদাচার করার বিষয়ে কুরআনের বাণী

দ্বিতীয় নির্দেশনা: “তুমি তাদেরকে ‘উফ' শব্দটুকুও বলো না।”[সুরা ইসরা, ১৭:২৩] 

উক্ত আয়াতে উল্লিখিত ‘উফ’ শব্দটি নিয়ে পাঁচটি মতামত রয়েছে: 

১. ব্যাকরণবিদ খলীল (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘এর অর্থ হলো নখের ময়লা। 

২. আসমাঈ (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে এর অর্থ হলো, কানের ময়লা। 

৩. ইমাম আবুল আব্বাস সা'লাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'এর অর্থ হলো, নখের কর্তিত অংশ।' 

৪. ইবনুল আম্বারি (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে এর অর্থ হলো, ‘কাউকে হেয় বা তুচ্ছ মনে করা। শব্দটি এসেছে (আল-আফাফু) থেকে। যার অর্থ হলো সামান্য, অল্প।' 

৫. ভাষাবিদ ইবনু ফারিস (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, (আল-আফাফু) মানে হলো, বাঁশ বা কাঠের টুকরোকে মাটি থেকে ওপরে তোলা। ইবনুল জাওযি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “মহান ভাষাবিদ আবুল মানসূর (রহিমাহুল্লাহ)এর কাছে আমি পড়েছি, শব্দের অর্থ হলো, দুর্গন্ধ ও বিরক্তি। আর এর প্রকৃত অর্থ হলো, কারও ওপর মাটি বা ধুলা জাতীয় কিছু পড়লে তাতে ফুঁ দেওয়া। পরবর্তীতে ‘বোঝা ও ভারী’ বলে অনুভূত হয় এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরক্তি প্রকাশ করতে ‘উফ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।'

তৃতীয় নির্দেশনা: ولا تنهرهما চতুর্থ নির্দেশনা: আল্লাহ তাআলা বলেন, “এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না।”[সূরা ইসরা, ১৭:২৩] 

অর্থাৎ তাদের মুখেমুখে চিৎকার করে ধমকের সুরে কথা বলো না। বিশিষ্ট তাবিয়ি আতা ইবনু আবী রবাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'তাদের ওপর হাত তুলবে না। বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলবে। অর্থাৎ তোমার সর্বোচ্চ সাধ্যানুযায়ী তাদের সাথে নম্ৰভাষায় কথা বলবে৷ [ইবনু কাসীর, তাফসীর, ৫/৬১; তাবারি, তাফসীর, ৫/৪৮। ]

৪র্থ নির্দেশনা:

واخفض لهما جناح الذل “তুমি তোমার বিনয়ের ডানা তাদের দু'জনের জন্য নত করে দাও।”[সূরা ইসরা, ১৭:২৪] 

অর্থাৎ মমতা ও ভালোবাসার সাথে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করো। 

পঞ্চম নির্দেশনা: মাতাপিতার অধিকারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে,  أن اشكر لي ولوالديك “তুমি আমার প্রতি ও তোমার মাতাপিতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো।”[সুরা লোকমান, আয়াত ১৪] 

এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা দুটি বিষয়কে একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যায়, মা-বাবার গুরুত্ব কতখানি! বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ তাআলার পরেই মা-বাবার মর্যাদা! 


Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.