সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য করণীয় কি? Happy Dompoti

বাংলাদেশের সংবিধান কি যুক্তিযুক্ত?
সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য ১২টি করণীয়:
(কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা এবং পূর্বসূরিদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের আলোকে):
.
(১) একে অপরকে শ্রদ্ধা ও উত্তম আচরণ:
.
অনেক দম্পতির মাঝে তীব্র ভালোবাসা সত্ত্বেও প্রায়ই ঝামেলা হয়। কারণ তারা একে অপরকে সম্মান দিতে জানে না। এটা খুব জরুরি। আয়িশা (রা.) বলেন, নবিজি কখনও কোনো খাদেম অথবা নারীর গায়ে আঘাত করেননি। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৫৯৪৪]
.
(২) কথা ও কাজ দ্বারা ভালোবাসা প্রকাশ করা:
.
এটা তো সবাই জানি যে, একটি সম্পর্কের স্থায়িত্বের জন্য ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। তবে, ভালোবাসা শুধু মনে না রেখে মুখেও রাখতে হয়। মাঝেমধ্যে লজ্জা ঝেড়ে ‘I Love You’ বা এ জাতীয় কথা বলতে হয়। পূর্বের নেককার ব্যক্তিগণ বলতেন, ‘পুরুষদের নিজের স্ত্রীকে ‘‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’’ বলা জাদুর মতো (কাজ করে)।’ [তারিখু ইবনি মাঈন: ২/৬৩]  
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে অকৃপণ ছিলেন।
.
(৩) পারস্পরিক বিশ্বাস ও সুধারণা:
.
একে অপরকে চোখ বুজে বিশ্বাস করার মতো আস্থা তৈরি করতে হবে। জীবনসঙ্গীর সাথে কখনও মিথ্যা বলা যাবে না বা প্রতারণা করা যাবে না। একবার বিশ্বাস ভেঙে গেলে সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়। তাই, কখনও এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে পরস্পরে অবিশ্বাস, সন্দেহ ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়। তবে, অহেতুক সন্দেহ করা অন্যায়। মজবুত প্রমাণ ব্যতীত শুধু ধারণার বশে সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘‘হে মুমিনগণ, তোমরা বহু রকম অনুমান থেকে বিরত থাকো। কেননা, কোনো কোনো অনুমান গুনাহ। তোমরা কারও পেছনে গোয়েন্দাগিরি করো না।’’ [সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২]
.
খুব ভালোভাবে জেনে রাখবেন: দাম্পত্যসম্পর্কের স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তার খুঁটি হিসেবে তিনটি বিষয় কাজ করে। সেগুলো হলো: পারস্পরিক ভালোবাসা, একে অপরকে সম্মান করা এবং পরস্পরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। এর কোনোটি না থাকলে সম্পর্ক জটিল হয়ে পড়ে।
.
(৪) পরস্পরের জন্য আন্তরিকভাবে দু‘আ করা:
.
কুরআন থেকে সুন্দর একটি দু‘আ:
.
رَبَّنَا هَبْ لَـنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا
.
অর্থ: হে আমাদের রব! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানান। [সুরা আল-ফুরক়ান, আয়াত: ৭৪]
.
এটি স্বামীর জন্য স্ত্রীও পড়তে পারবেন।
.
(৫) প্রতিযোগিতা নয়, চাই সহযোগিতা:
.
জীবনসঙ্গীকে কখনও ‘প্রতিযোগী’ ভাববেন না, বরং তাকে ‘সহযোগী’ মনে করুন। দুটো দেহের একটি আত্মা হয়ে চলুন। স্যাক্রিফাইস করার মানসিকতা গড়ুন। আয়িশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসায় কী করতেন? তিনি বলেন, নবিজি ঘরের বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৭৬]
.
(৬) স্বামীর দায়িত্ব ও স্ত্রীর আনুগত্য:
.
দাম্পত্যজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্বামীকে অবশ্যই তার স্ত্রী ও সংসারের যাবতীয় বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। আর, স্ত্রীকে অবশ্যই স্বামীর সকল বৈধ আদেশ মানতে হবে। কারণ, আল্লাহ স্বামীকে দায়িত্বশীল বানিয়েছেন। সুতরাং পরিবারের কর্তা হিসেবে স্বামীর আনুগত্য করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘‘পুরুষেরা (স্বামী) নারীদের (স্ত্রীর) কর্তা।’’ [সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪] 
তবে, এই কর্তৃত্বের দোহাই দিয়ে স্ত্রীর উপর যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ছড়ি ঘুরানো যাবে না। বরং তাকে যথার্থ সম্মান দিতে হবে, তার সাথে যথাসাধ্য পরামর্শ করে সংসারকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করতে হবে।
.
(৭) তৃতীয় পক্ষ থেকে সতর্কতা:
.
দাম্পত্যজীবনে মনোমালিন্য হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে, এই মনোমালিন্যের বিষয়টি নিজেদের মাঝে রাখতে হবে এবং নিজেরা নিজেরা মীমাংসা করতে হবে। কখনই কোনো তৃতীয় পক্ষকে সমাধানের জন্য আনা যাবে না। মনে রাখবেন, অধিকাংশ তালাক ও বিচ্ছেদ হয় তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনের কারণে। সমাধানের জন্য এসে সংসারটা ভেঙে বিদায় নেয়। তবে, কখনও বড় ধরনের ঝামেলা হলে পারিবারিকভাবে মুরুব্বিদের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
.
(৮) কারও সাথে তুলনা নয়:
.
কোনো মানুষ পারফেক্ট না। প্রত্যেকের কম-বেশি ঘাটতি থাকে। তাই, কখনও অন্যের উদাহরণ দিয়ে জীবনসঙ্গীর ঘাটতি নিয়ে কথা বলা যাবে না। এই বিষয়টি সংসারে প্রচণ্ড বিদ্বেষ তৈরি করে এবং কুধারণার সূত্রপাত ঘটায়। অহেতুক সন্দেহের বীজ রোপিত হয় নিজেদের সুন্দর সম্পর্কে।
.
আব্দুর রাযযাক আল হালাবি (রাহ.) উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘তোমার স্ত্রীর সামনে অন্য কোনো নারীর প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকবে। তাছাড়া, তোমার মায়ের সামনেও তোমার স্ত্রীর প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকবে।’
.
(৯) একসাথে রাগ করা যাবে না:
.
সাহাবি আবুদ দারদা (রা.) তাঁর স্ত্রী উম্মু দারদাকে বলেছিলেন, ‘যখন আমি রাগান্বিত থাকবো, তখন তুমি আমাকে খুশি করবে আর যখন তুমি রাগান্বিত থাকবে, তখন আমি তোমাকে খুশি করবো। এমনটি না করলে একসাথে চলা সম্ভব হবে না।’ [ইমাম ইবনু হিব্বান, রওদ্বাতুল উক্বালা, পৃষ্ঠা: ২০৪]
.
অনেক পুরুষ মনে করেন, কোনো স্ত্রী কখনও স্বামীর উপর রাগ করতে পারবে না। অথচ, কখনও কখনও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অভিমান করে তাঁর স্ত্রীগণ তাঁর থেকে পুরো দিন দূরে থেকেছেন (ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫২৯১)। যদিও তাঁরা বেয়াদবি করতেন না। তাই, প্রয়োজনে অভিমানমিশ্রিত রাগারাগি দোষের কিছু নয়।
.
(১০) উভয়ে উভয়ের পরিবারকে সম্মান করা:
.
স্বামী তার স্ত্রীর পরিবারের লোকদের যথাযথ সম্মান দেবে, মাঝেমধ্যে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি যেতে দেবে। এক্ষেত্রে কোনোধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। স্ত্রী যদি তার নিজের টাকা থেকে তার বাবা-মা অথবা অন্যদেরকে সহযোগিতা করে, তবে স্বামী বাধা দিতে পারবে না। একইভাবে স্ত্রীও তার স্বামীর পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে। স্বামী যদি তাদেরকে কিছু দেয়, তবে মন খারাপ করবে না।  
.
(১১) ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন এবং ভালো গুণগুলো বড় করে দেখুন।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘নারীরা হলো পাঁজরের হাড়ের ন্যায় (বাঁকা ও কোমল)। যদি একেবারে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙে যাবে। সুতরাং, তুমি যদি তার থেকে উপকার লাভ করতে চাও, তাহলে ঐ বাঁকা অবস্থাতেই লাভ করতে হবে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫১৮৪]
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কোন মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না; (কেননা) তার কোনো একটি স্বভাবকে সে অপছন্দ করলেও, তার অন্য কোনো (স্বভাব)-কে সে পছন্দ করবে।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৩৫৪০]
.
(১২) ঘরে প্রবেশের সময় স্বামী সালাম দেবে এবং স্ত্রী তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে।
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন পরস্পরের প্রতি সালাম প্রদান করবে, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্ৰ অভিবাদন।’’ [সুরা আন নুর, আয়াত: ৬১]
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুমিন ব্যক্তি আল্লাহভীতির পর উত্তম যা লাভ করে তা হলো পূণ্যময়ী স্ত্রী। স্বামী তাকে কোনো নির্দেশ দিলে সে তা পালন করে; সে তার দিকে তাকালে (তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও প্রফুল্লতা) তাকে আনন্দিত করে এবং সে তাকে শপথ করে কিছু বললে সে তা পূর্ণ করে। আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে নিজের সম্ভ্রম ও তার (স্বামীর) সম্পদের হেফাজত করে।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৮৫৭; হাদিসটির একজন বর্ণনাকারী দুর্বল]
.
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দাম্পত্যজীবনে বরকত ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করুন। আমিন।
Read Also :

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.